ধৈর্য্য ও অনুশীলন জীবনের সফলতার মূলমন্ত্র
নাসির ইসলাম শান্ত : দেশ পরিচালনা ও জাতির উন্নয়ন অব্যাহত রাখার জন্য রাজনীতি’র বিকল্প কিছু নেই। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনীতির অনুপস্থিতি একেবারেই অকল্পনীয়। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা ব্যবস্থা, খাদ্য ব্যবস্থা সর্বক্ষেত্রে রাজনৈতিক ভূমিকা লক্ষণীয়। বিগত এক যুগ ধরে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে তা আগে কখনো হয়নি। সেই সাথে ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে বুঝতে পারবেন অতীতের রাজনীতি আর বর্তমানের রাজনীতির মধ্যে কতটা তফাৎ!

রাজনীতি করতে হলে আপনাকে আগে সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে।তার সাথে হতে হবে মেধাবী, পরিশ্রমী, দয়াবান, দ্বায়িত্বশীল, নীতিবান।রাজনীতি করতে হবে সুস্থ ভাবে,বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারন করে। বর্তমান সময়ে সুস্থ রাজনীতি করা অনেক কঠিন। অনেক কিছু সহ্য করতে হয়। রাজপথে ত্যাগীদের থেকে তেলবাজিদের সফলতা বেশি। রাজনীতি সাধনার বিষয়।চর্চা আর অনুশীলনের বিষয়। রাজনীতিতে অনেক কিছু সহ্য করে নিজের নীতিতে অটল থাকতে হবে।নিজের নীতি থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না।সুস্থ রাজনীতি করতে হলে প্রচুর ধৈর্য্য আর অনুশীলনের দরকার।আপনি ধৈর্য আর অনুশীলন দিয়ে সব কিছু জয় করতে পারবেন।দেশের সব বড় বড় নেতারা এক সময় পাড়া-মহল্লায়, রাস্তায়, স্কুল-কলেজে সংগ্রাম করেই রাজনীতিকে সবার উপরে নিয়ে গিয়েছে। দেশের প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে তারা স্বোচ্চার ছিলো। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত সকল সংগ্রামের প্রথম সারিতে ছিলো সুস্থ রাজনীতিবিদরা। সৃষ্টিশীল ও নৈতিক রাজনীতির অনুশীলন পরিলক্ষিত হয়েছে অতীতে।
আমরা সবাই জানি ধৈর্য্য আর অনুশীলন এই দুইটি শব্দের মূল্য অপরিসীম।জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই দুইটি জিনিসকে কাজে লাগাতে হয় সমান তালে।আপনি যদি কখনো কোনো সফল ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেন যে আপনার সফলতার মূল চাবিকাঠি কি ছিলো??
নিসন্দেহে তিনি উত্তরে বলবেন, ধৈর্য্য আর অনুশীলন। পৃথিবীর যত বড় বড় ব্যক্তি আছে যতো বড় বড় রাজনীতিবিদ আছে তারা সবাই ছিলো প্রচুর ধৈর্যশীল এবং অনুশীলনকারী। তারা একটি কাজ ততক্ষণ পর্যন্ত করতো যতক্ষণ না সেই কাজটি পুরোপুরি হচ্ছে। তারা একবারে না পারলে দ্বিতীয় বার করতো দ্বিতীয় বার না পারলে তৃতীয় বার। এভাবে তারা বার বার চেষ্টা করেই যেতো। তাদের ধৈর্য্য আর এই অনুশীলনের কারনেই আজ তারা সফলতার চূড়ায় পৌঁছেছেন।
ধৈর্য্য হলো একজন সফল মানুষের প্রধান গুন। ধৈর্য্যই মানুষকে সব বিপদ আর দুরাবস্থার মধ্যে আশাবাদী হওয়ার শক্তি দেয়। যার মধ্যে ধৈর্য্য নেই, তাকে দিয়ে আসলে কিছুই হয় না। একজন মানুষের ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করার ক্ষমতা তার সামনে থেকে যে কোনও বাধাকে সরিয়ে দিতে পারে। যে কোনও কঠিন কাজকে সহজ করে দেয় এই একটি মাত্র গুণ। মানুষকে যদি জীবনে সফল হতে হয়,তবে তার মাঝে ধৈর্য্য ধরার গুণ অবশ্যই থাকতে হবে। এমনকি সৃষ্টিকর্তার বানীতেও ধৈর্য্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। একদম প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে আজকের যুগ পর্যন্ত যত সফল ও জ্ঞানী মানুষ এসেছেন, সবাই ছিলেন ধৈর্য্যশীল।
ধৈর্য্য ধরা মানে ভরসা করা। যার মাঝে ধৈর্য্য নেই,ধরে নিতে হবে সে একজন দুর্বল মনের মানুষ, যে অল্পতেই অস্থির হয়ে পড়ে। একজন মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও সাহস না থাকলে তার মাঝে ধৈর্য্য থাকে না। একজন মানুষের মাঝে ধৈর্য এর অভাব থাকলে অনুপ্রেরণা আর অনুশীলনের মাধ্যমে সে এই গুণটি অর্জন করতে পারে।মানুষের অভিজ্ঞতা বারে কখন জানেন??
যখন সে একটি কাজ যতক্ষণ পর্যন্ত না হচ্ছে ততোক্ষণ পর্যন্ত চেষ্টা করে যায় তখন। চেষ্টার আরেক নাম অনুশীলন বা চর্চা। এর মানে একই কাজকে বার বার করা।কত বার করতে হয় জানেন?? যতক্ষণ না কাজটা পুরোপুরি হচ্ছে।চর্চা বা অনুশীলন দিয়ে বড় বড় পাহাড় ও নাড়ানো যায়।
রাজনীতিবিদ, নেতা, সংগঠক, দেশপ্রেমিক, অসাম্প্রদায়িক মনোভাব, উদারতা যে দিক হতে বিবেচনা করা হোক না কেন নিবিড় পর্যালোচনায় যে কোন বিবেচনায় অনবদ্য, নিরূপম এবং অসাধারণ ব্যক্তি স্বাতন্ত্রমন্ডিত নিদাঘ চরিত্রের অধিকারী একজন সফল সংগঠক হতে হবে। একজন মানুষকে যে সকল গুনাবলী উন্নত রাজনীতিবিদ, বিখ্যাত নেতা এবং আদর্শ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে তার সব গুণাবলী একজন রাজনীতিবিদ এর মধ্যে থাকতে হবে। অহংবোধ, প্রতিশোধ পরায়নহীন মনোভাব, বলিষ্ঠ চরিত্রের পাহাড়সম দৃঢ়তা তাকে গড়ে তুলবে একজন আকর্ষণীয় মানুষ হিসেবে। যেই তার সান্নিধ্যে যাবেন সেই মুগ্ধ হবেন কোন না কোনভাবে। যা তাকে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে তুলে নিয়ে যাবে একদিন। আদর্শ, নৈতিকতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে সভ্যতার আলোকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে নিজ জন্মভূমিকে । রাজনৈতিক জনপ্রিয়তার এই পথ পরিক্রমায় বিভিন্ন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে মাথা উচু করে দাঁড়াবার দু:সাহসিক দৃষ্টান্ত থাকতে হবে রাজনৈতিক জীবনে। সময়ের সাথে নিজেকে সু-সংগঠক, সু-প্রতিষ্ঠিত, ও সু-পরিচিতি অর্জনেও সার্থকতা গড়ে তুলতে হবে এদেশের মানুষের জন্য আর এর সব কিছুই সম্ভব ধৈর্য আর অনুশীলনের মাধ্যমে।
জীবনে চলার পথ সব সময় মসৃণ নয়। জীবনের শত প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে চলতে হয়। আজকে এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা খ্যাতি, সম্মান ও অর্থ-বিত্তে অনন্য। তাদের জীবনের শুরুটা হয়েছিল একেবারেই সাদামাটা। দারিদ্রতা ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা তাদের চলার পথকে রুখতে পারেনি। সাধনার মধ্য দিয়ে তারা ঠিকই পৌঁছেছেন সফলতার শীর্ষে। স্বপ্নের সোনার হরিণকে করেছেন মুঠোবন্দী। তারা প্রমাণ করে দিয়েছেন কোনো কাজই ছোট নয়। নিষ্ঠা, সততা আর পরিশ্রমের ফসল তুলেছেন তারা। তাদের এই পথচলা জীবন জয়ের গল্প হয়ে প্রেরণা জোগায় বিশ্ববাসীকে।তারা ধৈর্য্য আর অনুশীলন দিয়ে বিশ্ব জয় করে নিয়েছে।আজকে আমি আপনাদের কাছে এরকম কয়েকজন বিশ্ব জয় করা রাজনীতিবীদ এবং সফল ব্যক্তির সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত তুলে ধরবো।
আব্রাহাম লিংকন : যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি- আমেরিকার সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বিশ্বের সেরা রাজনীতিবিদদের একজন। তার শৈশব ও কৈশোর কিন্তু প্রাচুর্যে ভরপুর ছিল না। দরিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত ছিল তার পরিবার। বাবা মুচি ছিলেন। তবু সংসার ঠিকমতো চলত না। তাই নিজেও মুচির কাজ করেন। মুচির ছেলে বলে তাকে খেপাত সবাই। নিচু দৃষ্টিতে দেখত তাকে। উপহাসের পাত্র ছিলেন বন্ধুদের কাছে। কেউ খুব একটা মিশতে চাইত না। নিজের স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে রাজনীতিতে নেমে পরেন।একের পর এক আন্দোলন করেন দেশ ও জাতির মন জয় করেন।অবশেষে ধৈর্য্য ও রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে জীবনে এগিয়ে চলে নিজের স্বপ্ন পূরণ করেন।হয়ে উঠেন বিশ্বের সেরা রাজনীতিবিদদের একজন।
এ পি জে আবদুল কালাম :ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট-বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আবদুল কালামের গবেষণা কর্ম সারা বিশ্বে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়ে আসছে। এ পি জে আবদুল কালাম একজন স্বনামধন্য বিজ্ঞানী, পণ্ডিত ও লেখক। কিন্তু তাঁর ছেলেবেলা ও কৈশোর বিত্ত-বৈভবে কাটেনি। তার বাবা ছিলেন একজন সাধারণ নৌকার মাঝি। বাবা নৌকা চালিয়ে যা আয় করেন তাতে সংসার চলত না। অন্যদিকে সেই নৌকাটাও নিজের নয়। আরেকজনের কাছ থেকে নৌকা ধার করে বাইতে হতো তাকে। এদিকে আবদুল কালামের নিজের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে যে কোনো কাজ চাই। আবদুল কালাম প্রথমে সংবাদপত্র বিক্রির কাজ নেন। শৈশবে আঁতসবাজি আকাশে জ্বলতে দেখে ভেবেছিলেন এমন কিছু একদিন বানাবেন যা আকাশ জয় করবে। স্বপ্নকে বাস্তবে নামিয়ে আনা সফল ব্যক্তিদের একজন তিনি। ড. কালাম ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও প্রতিরক্ষা উন্নয়ন পরিকল্পনার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানী ও ক্ষেপণাস্ত্র যন্ত্রবিদ রূপে তার খ্যাতি অচিরেই প্রতিষ্ঠিত হয়। অগ্নি, পৃথ্বী, আকাশ, ত্রিশূল, নাগা ইত্যাদি ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণে তার অবদান ও কৃতিত্ব অপরিসীম। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পেয়েছেন ‘ভারতরত্ন’।তার জীবনে এতো সফলতা আসার মূল কারন ছিলো ধৈর্য্য আর অনুশীলন। দারিদ্রতা তাকে দূর্বল করতে পারে নি, তিনি পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন এবং জীবনের সকল বাধাকে পরিক্ষা মনে করে ধৈর্য্য সহকারে পাশ করে সফল জীবনে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার ধৈর্য্য আর অনুশীলনের মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে উঠেন বিশ্বের অন্যতম সেরা রাজনীতিবিদ ও বিজ্ঞানী।
এন্ড্রু কার্নেগি : ধনকুবের শিল্পপতি ও দানবীর – সর্বকালের শীর্ষ ধনকুবেরদের একজন এন্ড্রু কার্নেগি। ২৪ লাখ ৪১ হাজার ২২০ কোটি টাকার মালিক ছিলেন এন্ড্রু কার্নেগি। অনেকেই হয়তো জানেন না, এন্ড্রু কার্নেগি বস্তির ছেলে ছিলেন। ছোট কুঁড়েঘরে থাকতেন। ১২ বছর বয়সে তিনি স্থানীয় পাবলিক পার্কে ঢুকতে চেয়েছিলেন। তার ময়লা-নোংরা পোশাকের জন্য দারোয়ান তাকে ঢুকতে দেয়নি। সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন কোনো দিন টাকা হলে এই পার্ক তিনি কিনে নেবেন। তারপর পরিণত বয়সে ব্যবসা শুরু করেন।লৌহশিল্পে তিনি অভাবনীয় সাফল্যের দেখা পান। স্টিলের ব্যবসা থেকে স্রোতের মতো টাকা আসতে শুরু করে। ১৯০১ সালে এক ব্যাংকারের কাছে স্টিল মিলটি বিক্রি করেন ৪৮০ মিলিয়ন ডলারে। এরপর এক বিলিয়ন ডলার মূলধন খরচ করে একটি কারখানা স্থাপন করেন। ৩০ বছর পরে এন্ড্রু কার্নেগি তার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেছিলেন। তিনি সেই পার্কটি কিনেছিলেন। সেখানে একটি নতুন সাইনবোর্ড লাগিয়েছিলেন। সে সাইনবোর্ডে লেখা ছিল-আজ থেকে দিনে বা রাতে, সকালে বা বিকালে, যে কোনো বয়সের, যে কোনো মানুষ, যে কোনো পোশাকে এই পার্কে প্রবেশ করতে পারবে।তিনি দানশীলতার জন্য খুব বিখ্যাত ছিলেন। তার সময়ে দান করা সম্পদের অর্থমূল্য ১০০ কোটি টাকারও বেশি। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তিনি জীবনভর দান করেন। তাছাড়া তিনি এলাকার উন্নয়ন ও শিক্ষা বিস্তারে প্রচুর অর্থ খরচ করেন।যে ছেলেকে তার নোংরা পোষাকের কারনে দারোয়ান পার্কে ঢুকতে দেয়নি,সেই ছেলে নিজের ধৈর্য, অনুশীলন আর মেধা দিয়ে নিজেকে এমন ভাবে তৈরি করেছে যাতে সে তার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে পারে।৩০ বছর পর সে ওই পার্কটি কিনে ফেলেন।একমাত্র ধৈর্য আর অনুশীলনই পারে আপনাকে সফল ব্যাক্তি বানাতে।
পাবলো পিকাসোর জীবন বৃত্তান্ত পড়েছি। পাবলো পিকাসো দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ট চিত্র শিল্পী ছিলেন। একদিন পিকাসো নিউইয়র্ক এর একটা জায়গায় ঘুরে সময় কাটাচ্ছিলেন।এমন সময় একটা মহিলার সাথে তার ধাক্কা লাগে,সাথে সাথে ওই মহিলাটি পাবলো পিকাসো কে চিনে ফেলে এবং দৌড় দিয়ে পাশের একটি দোকান থেকে পেন্সিল আর একটা সাদা খাতা নিয়ে এসে পাবলো পিকাসোর হাতে দিয়ে বললো স্যার can you draw something for me?(আপনি কি আমার জন্য কিছু একেঁ দিতে পারবেন?) পাবলো পিকাসো খাতা আর পেন্সিল নিয়ে হাত ঘুরিয়ে ৩০ সেকেন্ড এর মধ্যে একটি ছবি একে দেয়।এবং বলে this is for you, is a paint that worth of 5 million (এটি আপনার জন্য,এই চিত্রটির মূল্য ৫০ লক্ষ টাকা) মহিলাটির বিশ্বাস হয়নি। সে ভাবছে কিভাবে একজন মানুষ ৩০ সেকেন্ডে একটি ছবি আকেঁ এবং তার মূল্য নাকি আবার ৫০ লক্ষ টাকা,এটা কিভাবে সম্ভব?
এরপর ওই মহিলাটি বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দাম জিজ্ঞেস করতে থাকে,হঠাৎ এক ভদ্রলোক বললো এটা তো পাবলো পিকাসোর আকাঁ ছবি।মহিলাটি বললো জ্বি এটা পাবলো পিকাসোর আকাঁ ছবি কিছুক্ষণ আগেই এঁকেছে, আপনি কি এটা নিবেন আর যদি নিতে চান তাহলে কত দাম দিবেন?উত্তরে ওই ভদ্রলোক কোনো কথা না বাড়িয়ে,সাথে সাথে বললো এটা যদি সত্যিই পাবলো পিকাসোর আকাঁ ছবি হয় তাহলে আমি ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে নিবো।মহিলাটি এই কথা শুনে তো পুরাই অবাক।মানে একজন ব্যাক্তি ৩০সেকেন্ডে একটি ছবি একে দেয় এবং সে ছবিটির মূল্য বাজারে ৫০ লক্ষ টাকা। এটা কিভাবে সম্ভব??
এরপর মহিলাটি পাবলো পিকাসোকে খুঁজতে থাকলো। খুঁজতে খুঁজতে দুই মাস পার হয়ে গেলো,অবশেষে তাকে খুঁজে পেলো। সাথে সাথে তার কাছে দৌড়ে গিয়ে ছবিটি দেখিয়ে বললো স্যার চিনেছেন আমাকে?আমি ওই মহিলা যাকে আপনি ৩০সেকেন্ড এ একটি ছবি একে দিয়ে বলেছিলেন এই ছবিটির মূল্য ৫০ লক্ষ টাকা।পাবলো পিকাসো বললো হ্যাঁ আমি জানি আর এটা আমারই আঁকা ছবি যার মূল্য ৫০ লক্ষ টাকার ও বেশি। এরপর মহিলাটি পাবলো পিকাসো কে বললো স্যার আমি আপনার থেকে শিখতে চাই কিভাবে ৩০ সেকেন্ড এ ৫০ লক্ষ টাকার ছবি আকা যায়! পাবলো পিকাসো ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে একটি মুচকি হাসি দিয়ে বললো, ‘যে ছবিটা আপনি আমাকে ৩০ সেকেন্ড এ আঁকতে দেখেছেন সেটা আঁকতে আমার ৩০ বছর সময় লেগেছে ।৩০ বছর চেষ্টা করার পর আমি আজকের পাবলো পিকাসো।আজকে আমি যা তা শুধু মাত্র চেষ্টা আর বার বার অনুশীলনের কারনেই। অতএব আপনাকেও এরকম ছবি আঁকতে হলে অনেক বছর অনুশীলন আর ছবি নিয়ে চর্চা করতে হবে পাশাপাশি প্রচুর ধৈর্য্য ধরতে হবে।’
অনুশীলন আর ধৈর্য্য এমন একটি জিনিস যা দিয়ে আপনি পৃথিবীকে জয় করতে পারবেন। আপনি যে কাজে যতো বেশি অনুশীলন করবেন আর ধৈর্য্য ধরবেন সে কাজে ততো বেশি সফলতা পাবেন। এ সময়ে বিশ্বখ্যাত ব্রাজিলিয়ান লেখক পাওলো কোয়েলহো বলেছিলেন – আমার জীবনে আমি অনেক ঝড় দেখেছি। আর আমি শিখেছি ঝড়কে নিয়ন্ত্রণের শক্তি আমার নেই। কিন্তু আমার আছে ধৈর্য্য,যার মাধ্যমে আমি ঝড়ের সময় পার করে আগামীর দিকে তাকাতে পারি।
মানুষের জীবনে সাফল্য ও ব্যর্থতা হলো পাহাড়ে চড়াই-উৎরাই এর মতো।
এই দুটি সবসময় এ থাকবে জীবনে। এই উঁচু নিচু যাত্রা’র মধ্যে দিয়ে’ই আমাদের সকলকেই যেতে হয় জীবনে। মনে রাখতে হবে-আপনার জীবনটা কিন্তু একান্তই আপনার, আপনি কী হবেন বা কী করবেন সে ব্যাপারে অন্যরা পরামর্শ দিতে পারে কিন্তু তাদের ইচ্ছা আপনার উপর চাপিয়ে দেওয়ার কোন অধিকার নেই কারো। কাউকে সেই সুযোগ দিতেও নেই কখনো। আমার মতে জীবনে সবকিছু একবার হলেও চেষ্টা করে দেখা উচিত। হোক সেটা রাজনীতি বা অন্য কিছু। স্রষ্টা প্রতিটি মানুষকে কিছু না কিছু ক্ষেত্রে অনুপম দক্ষতা দিয়ে পাঠিয়েছেন, আপনি সেটি কখনো জানতেও পারবেন না যতদিন না চেষ্টা বা অনুশীলন করে দেখছেন।
আরও মনে রাখবে স্বপ্ন আর মানব সত্ত্বার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে কেবল একটি জিনিস-সেটি হচ্ছে অজুহাত! যে মুহূর্ত থেকে মানুষ অজুহাত দেখানো বন্ধ করে কাজ শুরু করে সে মুহূর্ত থেকে তার স্বপ্ন আর স্বপ্ন থাকবে না,সেটি বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করবে! তাই ব্যর্থতায় হতাশ না হয়ে ধৈর্য্য ধরতে হবে এবং চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আমরা সবাই ই শৈশবকালে পড়েছিলাম! একবার না পারিলে দেখো শতবার। এটাই মূল কথা। হাজার বার চেষ্টার মধ্য দিয়েই মানুষকে পরাজিত করতে হবে ব্যর্থতাকে, পৌঁছাতে হবে কাঙ্খিত লক্ষ্যে।
লেখক: দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র, পাহাড়তলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।