স্বাস্থ্য

নবজাতকের গলায় দুধ আটকে গেলে করনীয়

নবজাতকের গলায় দুধ আটকে গেলে কী করবেন? 

নবজাতকদের পরিচর্যা করা একটি কঠিন কাজ। তাদের খাবার খাওয়ানো যেন দ্বিগুণ কঠিন। অনেক সময় দেখা যায়, নবজাতককে দুধ খাওয়াবার সময় গলায় দুধ আটকে গেছে। নবজাতকের গলায় দুধ আটকে গেলে অনেক মা বাবাই চিন্তায় পড়ে যান। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা নবজাতকের গলায় দুধ আটকে গেলে কী করতে হবে সে বিষয়ে আলোচনা করব। 

নবজাতকের গলায় দুধ আটকে গেলে কী করবেন তা কেন জেনে রাখা প্রয়োজন

নবজাতক শিশুকে দেখা শোনা করতে হয় বিশেষ যত্নের সাহায্যে। আমরা জানি, নবজাতকের প্রধান খাদ্য হচ্ছে দুধ। দুধ তরল খাদ্য হলেও অনেক সময় দেখা যায় নবজাতকের গলায় দুধ আটকে যায়। নবজাতকের গলায় দুধ আটকে গেলে বাবা মা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। কেননা, গলায় দুধ আটকে গেলে সেখান থেকে হতে পারে অনেক বড় ধরণের সমস্যা। শিশুমৃত্যুর মত ঘটনাও বিরল নয়। তাই প্রথমত নবজাতককে দুধ খাওয়াবার সঠিক নিয়ম জানতে হবে। দ্বিতীয়ত, নবজাতকের গলায় দুধ আটকে গেলে কী করণীয় তাও জেনে রাখতে হবে। কেননা জরুরি প্রয়োজন এর সময় এসব জানা কাজে আসবে।

নবজাতকের গলায় দুধ আটকে গেলে করণীয়

মানুষের দেহে খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী খুব কাছাকাছি অবস্থিত। অনেক সময় খাবার খাদ্যনালীতে যাওয়ার পরিবর্তে শ্বাসনালীতে ঢুকে যায়। নবজাতকের ক্ষেত্রে এই সমস্যা একেবারেই বিরল নয়। নবজাতকের গলায় দুধ আটকে গেলে সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এমন কি এ থেকে বাচ্চা মারা পর্যন্ত যেতে পারে। নবজাতককে দুধ খাওয়াতে গিয়ে নবজাতকের গলায় দুধ আটকে গেলে মায়েদের কয়েকটি জিনিস অনুসরণ করতে হবে। গলায় দুধ আটকে গেছে বুঝতে পারলেই নবজাতককে পাশ ফিরিয়ে শুইয়ে দিতে হবে প্রথমে। তারপর মাথা নিচু করে রেখে এবং মুখ ফাঁকা করে রেখে পিঠে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, খুব বেশি জোরে চাপ দেওয়া যাবে না। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। আস্তে আস্তে চাপ দিতে হবে। এতে বাচ্চার গলায় আটকে থাকা দুধ বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা থাকে। সবচেয়ে ভালো হয়, গলায় দুধ আটকে গেছে বোঝার সাথে সাথে চিকিৎসক এর শরনাপন্ন হওয়া। যদিও পাশাপাশি প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট চালিয়ে যেতে হবে। 

নবজাতকের গলায় দুধ আটকে গেলে তা বুঝবেন কীভাবে?

 নবজাতকের গলায় দুধ আটকে গেলে অনেক অভিভাবকই তা বুঝে উঠতে পারেন না। বেশ কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায় যে নবজাতকের গলায় দুধ আটকেছে। যেমন: বাচ্চা খাওয়াবার সময় ছটফট করলে, অনেক কাশি হলে, চোখ বড় করে তাকালে, মুখ থেকে লালা গড়িয়ে পড়লে বা হেচকি তুললে। এছাড়া, শিশুর মুখ কালচে বা নীলচে হয়ে এলে বুঝবেন তার শরীরে অক্সিজেন এর মাত্রা কমে আসছে। তখন দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। 

নবজাতকের গলায় দুধ আটকে গেলে কী করবেন তা যেমন জেনে রাখা উচিত, তেমনি কী করবেন না সেটিও জেনে রাখা দরকার। 

ভুলনিয়ম:

অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, নবজাতকের গলায় দুধ আটকে গেলে মায়েরা সন্তানকে কোলে নিয়ে পিঠে জোরে জোরে চাপড় মারেন। এই কাজটি কখনোই করা উচিত নয় কারণ, এতে দুধ শ্বাসনালীর আরো গভীরে চলে যেতে পারে ফলে সমস্যা আরো গুরুতর আকার ধারণ করবে। 

নবজাতককে কীভাবে দুধ খাওয়ানো উচিত

ডাক্তাররা সবসময় বলেন শিশুর পরিচর্যা করার সময় অন্য কোন দিকে মনকে ব্যস্ত রাখা যাবে না। কারণ নবজাতক শিশুরা অনেক বেশি সেন্সিটিভ। সামান্য অসচেতনতায় ঘটে যেতে পারে বড় অঘটন। তাই, নবজাতককে বোতলে বা বুকের দুধ খাওয়াবার সময় তার মুখের দিয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। সে সময় মোবাইলে বা অন্য কোন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা যাবে না। কারণ, মায়ের মনোযোগ অন্যদিকে থাকলে নবজাতকের মনযোগও সেদিকে চলে যায়। খাবার খাওয়ার সময় বেখেয়ালি হলে গলায় খাদ্য আটকাবার মত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এছাড়াও, ডাক্তার দের মতে, যে নবজাতকের শ্বাসকষ্ট এর সমস্যা আছে তাদের ঝিনুক বা চামচে করে কখনোই দুধ খাওয়ানো উচিত নয়। তাদের খুব সাবধানে ড্রপারে করে দুধ খাওয়াতে হবে। আবার, নবজাতক কাঁদছে বা হাত পা নাড়াচ্ছে খুব এমন অবস্থাতেও তাকে দুধ খাওয়ানো উচিত নয়। মায়ের জন্য পরামর্শ হলো শুয়ে থাকা অবস্থায় শিশুকে দুধ খাওয়ানো যাবে না। এতে গলায় দুধ আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। 

অনেক মায়েরা ভাবেন, নবজাতকের নাক টিপে ধরলে তারা হাঁ করবে। কিন্তু এভাবে কখনো খাবার খাওয়ানো উচিত না। এতে শিশুর নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। দুধ খাদ্যনালীর বদলে শ্বাসনালীতে চলে যায়। 

অনেক সময় টিকা দেওয়ার পর বা শরীর খারাপ থাকলে শিশু খেতে চায় না। তখন খুব সতর্কতার সাথে তাকে খাওয়াতে হবে। 

নবজাতকের গলায় দুধ আটকে গেলে কী করবেন তা নিয়ে এই প্রতিবেদনে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।