শিক্ষাঙ্গণ

জেনে নিন রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য কি

রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য কী? 

প্রাচীন সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য কী তা নিয়ে স্পষ্ট সীমারেখা না থাকলেও বর্তমান সময়ে কিন্তু রাষ্ট্র ও সমাজকে একই মনে করা হয় না। প্রাচীন গ্রিসের দিকে তাকালে দেখব তখন সেখানে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে তেমন কোন ভেদ ছিল না। রাষ্ট্র ও সমাজ বলতে মানুষ একই প্রতিষ্ঠান কে বুঝত। তবে সময় যত এগিয়েছে, মানুষ তত চিন্তা করতে শিখেছে। রাষ্ট্র কী আর সমাজ কী তা আবিষ্কার করতে পেরেছে। তাই আজকে আমাদের প্রতিবেদনের মূল বক্তব্য রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য কী এই বিষয় নিয়ে। 

জেনে নিন রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য কি

রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য কী? 

১. রাষ্ট্রের একটি নিজস্ব সীমারেখা আছে। যেমন: আমরা জানি বাংলাদেশ এর আয়তন নির্দিষ্ট। তবে সমাজের কিন্তু নির্দিষ্ট কোন সীমা নেই। সমাজ একটি এবস্ট্রাকট ধারণা। আমাদের দেশে যে সামাজিক অবস্থা, তা শুধু আমাদের দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে সেরকম নয়। তা দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

২. বর্তমানে রাষ্ট্রের হাতে সর্বোচ্চ ক্ষমতা থাকে। সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী রাষ্ট্র। তবে, সমাজের এই রকম কোন আইনগত ক্ষমতা থাকে না। 

৩. রাষ্ট্র গঠন হয় অনেক পরিকল্পনার দ্বারা৷ তবে সমাজ স্বত:স্ফূর্তভাবে তৈরি হয়। সমাজ কেউ ভেবে গঠন করে না। 

৪. রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে থাকে আইনের ওপর। অথচ, সমাজের ভিত্তি সমাজে বসবাস কারী মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, শ্রদ্ধা, ভালোবাসার নিরিখে। 

৫. আপনাকে রাষ্ট্রে বাস করতে হলে রাষ্ট্রের নিয়ম মেনে নাগরিক হতে হবে৷ এটা বাধ্যতামূলক। তবে, সমাজে বাস করলে সমাজের নিয়ম যে মানতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। 

রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে সম্পর্ক: 

পূর্বেই রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য কী তা বলার সময় উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রাচীন গ্রিসের মানুষ রাষ্ট্র ও সমাজকে একই মনে করত। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকেরা মনে করত রাষ্ট্র ও সমাজ অভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তবে হাল আমলের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এই মতবাদ আর মানেন না৷ তাদের কাছে রাষ্ট্রের সংজ্ঞা আলাদা আবার সমাজের সংজ্ঞা আলাদা।  রাষ্ট্রের নিজের বৈশিষ্ট্য আছে, যা সমাজের বৈশিষ্ট্য থেকে আলাদা। একই রাষ্ট্রের মধ্যে আলাদা আলাদা সামাজিক ক্ষেত্র থাকতে পারে। তাই রাষ্ট্রকে কখনোই সমাজের সমার্থক বলা যায় না৷ একত্ববাদী ধারণা, বহুত্ববাদী ধারণা বা মার্কসবাদী ধারণায় রাষ্ট্র ও সমাজের সম্পর্ক নিয়ে আলাদা আলাদা পরিপ্রেক্ষিত থেকে আলোচনা করা হয়েছে। একত্ববাদ রাষ্ট্রকে সর্বশক্তিমান প্রতিষ্ঠান বলে মনে করে৷ তারা রাষ্ট্র ছাড়া তার পাশে অন্য কোন প্রতিষ্ঠান এর অস্তিত্ব স্বীকার করে না। যেমন: নাৎসিবাদ বা ফ্যাসিবাদের ক্ষেত্রে আমরা এই চিন্তাধারা দেখতে পাই। 

বহুত্ববাদীরা বলেন রাষ্ট্রের মত সমাজও একটি প্রতিষ্ঠান। সমাজের রাষ্ট্রের মত একই কাজ বা বৈশিষ্ট্য না থাকলেও সমাজ এর পৃথক অস্তিত্ব বহুত্ববাদে স্বীকার করা হয়। 

মার্কসবাদে আবার বলা হয়, অনেক প্রাচীনকালে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ছিল না। সমাজ থেকে ধীরে ধীরে রাষ্ট্র সংগঠিত হয়েছে৷ মার্ক্সবাদে রাষ্ট্রকে মনে করা হয় শোষণ যন্ত্র আর সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলে মার্কসবাদ। 

রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য কী তা বোঝার জন্য জানা জরুরি যে রাষ্ট্র উদ্ভাবিত হবার অনেক আগে থেকে পৃথিবীতে সমাজের অস্তিত্ব ছিল। সেই সমাজ আজকের যুগের সমাজের মত আধুনিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ছিল না। কিন্তু তাতেও সাধারণ সামাজিক বৈশিষ্ট্য দেখা যেত৷ আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হল রাষ্ট্রের থেকে সমাজের পরিধি ও উদ্দেশ্য ব্যাপকতর। বর্তমান সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজের সহাবস্থান জরুরি কেননা রাষ্ট্র একা চলতে পারে না৷ আবার রাষ্ট্র ছাড়া সমাজও ছন্নছাড়া। তাই রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য কী তা বোঝার পাশাপাশি মনে রাখতে হবে যে রাষ্ট্র ও সমাজ পরস্পর পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীল।