অন্যান্য

শুটকি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

শুটকি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

বাঙালি আর মাছ এই জুটি বহু পুরোনো যুগ থেকেই জনপ্রিয়। মাছ বাঙালির প্রিয় খাবার। মাছ আর ভাত পাতে পড়লে বাঙালির যেন জমে ক্ষীর সব। টাটকা রুই-কাতলা, ইলিশ, ভেটকি, পাবদা বা মৌরলা মাছ যেমন প্রিয় বাঙালির পাতে, তেমন শুটকিও পিছিয়ে নেই। অনেকেই গন্ধের জন্য শুটকি খান না। তবে, অনেকেরই আবার প্রিয় খাদ্যের তালিকায় শুটকি থাকবে প্রথম সারিতে। শুটকি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা দুইই আছে। অনেকেই আছেন যারা শুটকি খেতে ভালোবাসেন অথচ শুটকি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানেন না। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা শুটকি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

শুটকি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

শুটকি মাছ কী

তাজা মাছ যদি ভালো ভাবে এবং সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ না করা হয় তাহলে তা পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রবল। আমরা জানি, খাবার সংরক্ষণ করার অতি প্রাচীন ও পরিচিত একটি পদ্ধতি হল খাবার শুকানো। একইভাবে মাছকে কড়া ও তীব্র রোদে শুকিয়ে শুটকি তৈরি করা হয়। একেই আমরা শুটকি মাছ হিসেবে জেনে থাকি। মাছ কড়া রোদে শোকানোর ফলে জল শুকিয়ে যায়। মাছের ভেতর জীবাণু প্রবেশ করে না। মাছ এভাবে সংরক্ষণ করতে লবণ ও ধোঁয়ার ব্যবহার করা হয়। 

কী কী মাছের শুটকি করা হয়

সাধারণত ছোট মাছের শুটকি বানানো হয়। রূপচাঁদা, লোটে বা লইট্টা মাছ, কাঁচকি মাছ, কুঁচো চিংড়ি, পুঁটি মাছ, চ্যাপা মাছ এদের শুটকি বানানো হয়। শুটকি মাছের তীব্র গন্ধের কারণে একে বেশি করে তেল মশলা দিয়ে কষিয়ে রান্না করতে হয়, যাতে গন্ধের তীব্রতা ঢাকা পড়ে। 

এখন জানা যাক শুটকি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। 

শুটকি মাছের উপকারিতা: 

১. শুটকি মাছ প্রোটিনের একটি বড় উৎস। প্রায় ৮৫ শতাংশ প্রোটিনের জোগান দিয়ে থাকে শুটকি মাছ। শরীরের প্রোটিনের ঘাটতি পূরণে এর জুড়ি নেই। ডিমের সমতুল্য প্রোটিন থাকে শুটকি মাছে। 

২. শুটকি মাছে আরও থাকে এন্টি অক্সিডেন্ট, যা দেহের ইমিউনো সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। 

৩. শুটকি মাছে থাকা সোডিয়াম ও পটাসিয়াম দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, জলের ভারসাম্য ঠিক রাখে এবং মাংসপেশি গঠন করতে সাহায্য করে। শুটকি মাছে থাকা পটাশিয়াম স্নায়ু ও হার্টের পক্ষেও উপকারী। 

৪. শুটকি মাছ দেহে উপকারী কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়ায়। 

৫. গর্ভবতী মায়েদের জন্য শুটকি একটি উপকারী খাবার কারণ এতে এমন উপাদান থাকে যা গর্ভাবস্থায় খেলে শরীর ভাল থাকে। 

৬. শুটকিতে থাকা ভিটামিন বি১২ শরীরে লোহিত রক্তকণিকা গঠনে সাহায্য করে এবং ব্রেনের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। 

৭. এছাড়া, শুটকি মাছে থাকা ফসফরাস দাঁত ও হাড়ের গঠন সুনিশ্চিত করে। 

৮. অনেক মানুষ থাকেন যারা দুধ খেয়ে হজম করতে পারেন না। তাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট বলা হয়। তাদের জন্য পুষ্টির একটি অন্যতম অপশন হতে পারে শুটকি মাছ। 

৯. শুটকি তে থাকে প্রচুর আয়রন যা শরীরে আয়রণের ঘাটতি পূরন করে। 

শুটকি মাছের অপকারিতা

শুটকি মাছের উপকারিতা অনেক থাকলেও কিছু কিছু মানুষ এর জন্য একেবারেই শুটকি খাওয়া উচিত নয়। 

১. শুটকি মাছে তীব্র গন্ধ থাকে। অনেকের কাছেই সেই গন্ধ বেশ কটু। যারা এই গন্ধ সহ্য করতে পারেন না, তাদের এই মাছ খাওয়া উচিত নয়। 

২. তীব্র গন্ধ এড়াতে প্রচুর তেল মশলা দিয়ে এই শুটকি রান্না করা হয়। তাই যাদের গ্যাস, এসিডিটি বা অম্বলের সমস্যা আছে তাদের উচিত শুটকি এড়িয়ে চলা। 

৩. শুটকি মাছে কোলেস্টেরল উপস্থিত থাকে। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা উচ্চ কোলেস্টেরল এর সমস্যা আছে তাদেরও শুটকি খাওয়া অনুচিত। 

৪. শুটকি তৈরি তে প্রচুর লবণ ব্যবহার করা হয়। আমরা জানি, লবণ ররক্তচাপ বাড়ায়। তাই, উচ্চ রক্তচাপ এর মত শারীরিক অসুস্থতা থাকলে শুটকি খাওয়া যাবে না। 

৫. বাতের ব্যথা থাকলে শুটকি মাছ খেলে ব্যথা বাড়তে পারে। 

৬. পিত্তথলীতে পাথর থাকলে শুটকি মাছ এড়িয়ে চলুন। নয়তো দেখা দিতে পারে নানান শারীরিক জটিলতা। 

৭. শুটকি সংরক্ষণ করতে অনেক সময় ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। কীটনাশক শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। 

৮. হার্টের সমস্যা থাকলে শুটকি মাছ খাওয়া উচিত নয়। 

৯. অনেকের শুটকি মাছ খেলে এলার্জির মত সমস্যা দেখা দেয়। তাদেরও উচিত শুটকি মাছ না খাওয়া। 

ডাক্তাররা সবসময় পরামর্শ দেন তাজা ও টাটকা মাছ খাওয়ার জন্য। তবে, বাঙালিরা নানা উপায়ে মাছ খেতে ভালোবাসেন। শুটকি তার মধ্যে একটি। শুটকি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা দুইই আছে। আজকের এই প্রতিবেদনে শুটকি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি যা থেকে আপনারা বুঝতে পারবেন যে কখন এই মাছ আপনার উপকার করবে এবং কখন খেলে উপকার এর বদলে ক্ষতি হতে পারে।