অভিমানের ফেরি চড়ে শেষ বিদায় চট্টগ্রামের তারেক সোলেমান সেলিমের
আজ সোমবার দুপুর ২ টায় ঢাকা ডেল্টা হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে চিরতরে না ফেরার দেশে চলে গেলেন চট্টগ্রামের সাবেক কাউন্সিলর তারেক সোলেমান সেলিম।

চট্টগ্রাম মহানগরে সবাই যখন ভোটের মাঠে নানা সমীকরণ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো ঠিক সেসময়ে একমাত্র ব্যতিক্রমী ব্যক্তি ছিলেন সাবেক এই কাউন্সিলর। ক্যান্সারের করাল গ্রাসে দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী ছিলেন হাসপাতালের বিছানায়।
১৮ জানুয়ারী (সোমবার) অবশেষে দুপুর ২ টায় অভিমান অনুযোগ বুকে চাপা দিয়ে চিরতরে চলে গেলেন না ফেরার দেশে সাবেক কাউন্সিলর সেলিম। ভোট যুদ্ধে বারবার বিজয়ী সেলিম হেরে গেছেন জীবনযুদ্ধে।
তারেক সোলেমান সেলিমের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে। পিতা মোহাম্মদ সালেহ আলকরণ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। স্কুল জীবন থেকেই তারেক সোলেমানের রাজনীতিতে হাতেখড়ি। পঁচাত্তর পরবর্তী আওয়ামী লীগের কঠিন দুঃসময়ে তিনি অংশ নিতেন রাজপথের বিভিন্ন মিছিল-মিটিং, সমাবেশে।
১৯৭৮ সালে আলকরণ ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কমিটি পুনর্গঠিত হলে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালন করেন সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবেও। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
১৯৭৯ সালে এক মিছিলে হামলা করে আওয়ামী লীগ নেতা এম এ ওয়াহাব, এম এ মান্নান, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে সন্ত্রাসীরা অপহরণ করলে যারা সেদিন দলীয় নেতাদের উদ্ধার করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম তারেক সোলেমান সেলিম। বিএনপি জামাত জোট সরকারের আমলে সবসময় ছিলেন সরকারি দলের রোষানলে। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি সন্ত্রাস দমন আইনে গ্রেপ্তার হন এবং কারাবাস করেন।
তারেক সোলেমান সেলিম আলকরণ ওয়ার্ডের চার বারের (১৯৯৪,২০০০,২০০৪, ২০১৫ সাল) নির্বাচিত কাউন্সিলর। ১৯৯৪ সালে তিনি সর্বপ্রথম জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন।
পেশীশক্তির রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের বিলাসী জীবনযাপনের চিরাচরিত সংস্কৃতির বিপরীতে তারেক সোলেমান সেলিম অভ্যস্ত ছিলেন সাধারণ জীবনযাপনে। নানা ত্যাগ তিতিক্ষা ও অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আজকের অবস্থানে আসলেও তারেক সোলেমানের শেষ সময় তেমন সুখকর ছিল না। চিকিৎসার পর্যাপ্ত অর্থ তার কাছে ছিলো না। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির ও চসিক আওতাধীন ওয়ার্ড সমূহের সাবেক কাউন্সিলরদের সহযোগিতায় অর্থ সংকট কিছুটা লাঘব হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো সম্ভব হয় নাই।
প্রসঙ্গত আসন্ন কাউন্সিলর নির্বাচনে দলের সমর্থন চেয়েও বঞ্চিত হন তারেক সোলেমান সেলিম। তারেক সোলেমানের এই বঞ্চিত হওয়া নিয়ে সেসময় অবাক হয়েছিলেন চট্টগ্রামের অনেক সিনিয়র নেতারাও। রাগ, ক্ষোভ নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থীও হয়েছিলেন। তার বিজয় নিয়েও কর্মী,সমর্থক এলাকাবাসীরাও অনেকটা নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু বিধাতার ডাকে সাড়া দিয়ে নির্বাচনের আগেই চিরতরে চলে গেলেন তারেক সোলেমান সেলিম।