জাতীয়রাজনীতিসকল সংবাদ

মুফতি হান্নানের জবানে রক্তমাখা ২১ আগস্ট

মুফতি হান্নানের জবানে রক্তমাখা ২১ আগস্ট
ছবিঃ সংগৃহীত

২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ব্যাপারে হারকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ এর প্রধান মুফতি আব্দুল হান্নানের স্বীকারোক্তি…

প্রশ্নঃ একুশে আগস্ট এর ব্যাপারটা বলেন,আপনি কিভাবে যুক্ত হলেন এটার সাথে?

২১ আগস্টের সাথে আমি সর্বপ্রথম যুক্ত হই ১৮তারিখে,আহাসনুল্লাহ কাজল আমাদের হারকাতুল জিহাদের সাংগঠনিক সম্পাদক,
তাকে মাওলানা শেখ ফরিদ হারকাতুল জিহাদের সাধারণ সম্পাদক এবং মাওলানা আবদুস সালাম হারকাতুল জিহাদের আমীর ওর মাধ্যমে আমাকে খবর দেয় যে একটা মিটিং আছে তাকে অবশ্যই ১৮তারিখ সকালেই তুমি চলে আসত বল।
তখন আমি মেরুল বাড্ডা,আনন্দ নগরে আমার বাসা ছিল।এরপর আমি যখন ওখানে আসি হারকাতুল জিহাদের অফিস মোহাম্মদপুর বাস ষ্টেশন, দারুল আরকা মাদ্রাসা। ওখানে আসার পরে শেখ ফরিদ,মাওলানা আবদুস সালাম,আমার সাথে ছিল আহসানুল্লাহ কাজল ও আমাদের কমান্ডার জাহাঙ্গীর বাদার জান্দাল।এখানে আলোচনা হলই, ওনারা পূর্বের আলোচনা করলেন যে, “আমাদের সাথে বিএনপির দুইটা মিটিং হয়েছিল হাওয়া ভবনে।পরপর হাওয়া ভবনে তিনটা মিটিং হয়,এখানে আমরা উপস্থিত ছিলাম।


ওনারা বললেন যে,১৪ তারিখে হাওয়া ভবনে প্রথম মিটিং হয়,এখানে আলোচনা হয়,এই মিটিং এ শরিক ছিলেন তারেক জিয়া,আলী হাসান মুজাহিদ, হারিছ চৌধুরী, আলী হাসান পিন্টু,হারকাতুল জিহাদের আমীর আবদুস সালাম,শেখ ফরিদ,আল মারকাতুল ইসলামের নায়াবে আমীর মুফতি আবদুল শীর।

তারেক জিয়া বলেন, বর্তমানে দেশের অবস্থা খুব খারাপ, আওয়ামীলীগ তথা শেখ হাসিনা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতেছে,দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেছে,জঙ্গিবাদ এমন বিভিন্ন কিছু বলে,দেশকে উশৃংখল এবং নষ্ট করে দিচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু একটা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

এর পরে আলী হাসান মুজাহিদ বললেন,আপনার কথা সত্য,শুধু তাই নয়, ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করতেছে,এ ব্যাপারে কাজ করা দরকার।
এরপরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন,কথা গুলো সবই সত্য।পরিষ্কার ভাবে বলুন কি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার!
দুইটি পদক্ষেপ নেওয়া যায়, হয়ত যে অরাজকতা সৃষ্টি তার রাজনৈতিক ভাবে ব্যাপক মোকাবিলা করতে হবে নয়ত তাকে(শেখ হাসিনা)মেরে এদেশ থেকে চির বিদায় করে দেয়া দরকার অর্থাৎ শেষ করে দেয়া দরকার।

মুফতি হান্নানের জবানে রক্তমাখা ২১ আগস্ট
ছবিঃ সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামী মেজর নূর ওখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন,আপনারা রাজনৈতিক ভাবে অবশ্যই করবেন,কিন্তু আমি তো তেমন রাজনীতি করি না।আমি জানি তার(শেখ হাসিনা) মোকাবেলা করতে হয়লে তিনটি পদক্ষেপ নিতে হবে, প্রথম তার বাড়িতে হামলা করতে হবে। অথবা তার আসা যাওয়ার পথে তাকে হামলা করে মেরে ফেলতে হবে।
নয়ত কোন মিটিং এ আক্রমণ করে তাকে মেরে ফেলতে হবে,কিন্তু জনগণের যাতে ক্ষতি না হয়। যাতে যত কম ক্ষতি করে তাকে শেষ করা যায় এই টাইপের আপনারা চিন্তা করেন।

তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবর বললেন,আমার কাছে গ্রেনেড আছে,আপনারা জানেন নাকি জানি না,এই গ্রেনেড ও ব্যবহার করা যেতে পারে।হ্যাঁ,যদি গ্রেনেড ব্যবহার করা হয় তবে রাস্তায় আক্রমণ করা যাবে না,ওনাকে কোন একই জায়গায় এক অবস্থানে আছে তখন আক্রমণ করতে হবে। যেমন কোন মিটিং এ আছে তখন আক্রমণ করলে কামিয়াব হওয়া যাবে।

আলোচনায় বলা হল ঠিক আছে,আজকে সমস্ত কথা শেষ করে না করে,আমরা পরে অলোচনা করি।পরের দিন আরেকটা মিটিং ডাকে যেখানে আলোচনা হয়। এখানে সিদ্বান্ত হয়,গ্রেনেড তো আমাদের কাছে আছে,এর সাথে রাইফেল অর্থাৎ অস্ত্র প্রদান করা হবে।যেহেতু গ্রেনেড আছে এর দ্বারা ক্ষতি কম হবে,বোমা বা বেষ্ট ব্যবহার করলে ক্ষতি বেশি হবে,আর যদি রাইফেল বা অস্ত্র ব্যাবহার করা হয় ক্ষতি আরো কম হবে।

সিদ্ধান্ত নেয়া হয়,গ্রেনেড ব্যবহার করা হবে,২১তারিখের আওয়ামী লীগ মিটিং ডেকেছে পল্টনের কাছাকাছি; মুক্ত অঙ্গনের ওখানে করার অনুমিত দেয়া হয়েছে। ওরা চেয়েছে পার্টি অফিসের সামনে। এখানে হোক ওখানে হোক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
এটা এতদূর এগিয়েছে যে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে,যেহেতু গ্রেনেড এবং অন্যান্য মালামাল ও আছে।সরকারি পুলিশ আছে আমাদের সাথে ও গোয়েন্দার লোকরাও আমাদের সাথে থাকবে,সহযোগিতা করবে।

এরপর ওনারা বললেন যে, আমরা আরেকটা মিটিং ডেকে সিদ্ধান্ত নি।
এর পর তৃতীয় মিটিং হয় লুৎফুজ্জামান বাবরের মিন্টু রোডের সরকারি বাস ভবনে।
ওখানেও তারেক রহমান ছাড়া,আলী হাসান মুজাহিদ,হারিজ চৌধুরী, আলী হাসান পিন্টু,হারকাতুল জিহাদের আমীর আবদুস সালাম,শেখ ফরিদ,আল মারকাতুল ইসলামের নায়াবে আমীর মুফতি আবদুল শীর,লুৎফুজ্জামান বাবর,আরিফুল ইসলাম আরিফ ছিলেন।

১৬তারিখের মিটিং এর পর সিদ্বান্ত হয়,১৮তারিখে একটা মূল বৈঠক আছে।
১৮তারিখের মিটিং এ আলোচনা হয়,এর পরে আমাদের বলা হয় যে একটা মিটিং আছে, ঐ মিটিং এ আমি,আবদুস সালাম,শেখ ফরিদ,জাহাঙ্গীর বাদার জান্দাল,আহাসনুল্লাহ কাজল এই কয়জন আমরা আবদুস সালাম পিন্টুর বাসায় যাই।এবং আমরা সর্বপ্রথম পিন্টুর ছোট ভাই তাজউদ্দীন এবং তার এক আত্নীয় আবু তাহেরকে দেখতে পাই। এর পর আমরা অপেক্ষা করার পর দুইটা গাড়ি আসে।প্রথম কালো রঙের পাজেরো গাড়ি গেইট দিয়ে ভিতরে ঢুকে তখন সে গাড়ি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বাবর নামে এরপর আরেকজন নামেন, দ্বিতীয় গাড়ি থেকে পরপর তিনজন নামে। এরপর ভিতরে বৈঠক হয়,এর পর আমরা ভিতরে ঢুকি,বাবরের সাথে যারা ছিল তাদের সাথে আমাদের পরিচয় হয়।

১৮তারিখের মিটিং এ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বাবর বলেন,গতকাল আমি যে বলছিলাম গ্রেনেড দেওয়ার কথা,এই গ্রেনেড আমি নিয়ে আসছি বলে,একটা সবুজ রঙের ব্যাগ ছিল ওখান থেকে একটা কাপড়ের/কাগজের থেকে দুইটা প্যাকেট বের করেন,ছোট-লম্বা ২ প্যাকেটে ৫টা করে গ্রেনেড ছিল এগুলো বের করে টেবিলে রাখেন।দুইটা গ্রেনেড খোলা ছিল,দুই পাশে টেপ দিয়ে মোড়ানো ছিল,দেখা যেত।২টা গ্রেনেড খোলা ছিল,১০টা হেন্ড গ্রেনেড ছিল,মোট ১২টি গ্রেনেড আমাদের হেন্ড ওভার করে।

এসি/বিবিএন /স্টাফ রিপোর্টার।

বে অব বেঙ্গল নিউজ - Bay of Bengal News

বে অব বেঙ্গল নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *