জাতীয়সকল সংবাদ

২৩ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি শান্তিচুক্তি, অশান্তির রামরাজত্ব পাহাড়ে

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ২৩ বছর পার হলেও শান্তি ফিরে আসে নাই পাহাড়ে। বরং চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক সংগঠনগুলো হয়ে পড়েছে নানা ভাগে বিভক্ত।

২৩ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি শান্তিচুক্তি, অশান্তির রামরাজত্ব পাহাড়ে
চিত্রঃ শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর।

বর্তমানে মোটা দাগে চারটি সংগঠন তিন পার্বত্য জেলায় নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ আছে প্রতি বছর পার্বত্য জেলায় চারশো কোটি টাকারও বেশী চাঁদা লেনদেন হয়ে থাকে। নেপথ্যে আছে এসব আঞ্চলিক সংগঠন। টমটম লাইন, বিভিন্ন দূরপাল্লার যানবাহন স্টেশন, দোকানপাট, যেকোন ধরনের ভবন নির্মাণ সহ যাবতীয় সকল ছোট বড় ব্যবসা করতে হলে চাঁদা দিতে হয় তাদের। চাঁদা না দিলে শুনতে হয় নানা হুমকি-ধমকি। এমনকি চাঁদার জন্য খুনের ঘটনা পর্যন্ত ঘটে।

খাগড়াছড়ি’র একজন যানবাহন চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘নিয়মিত বিভিন্ন সংগঠনকে মাসোহারা দিতে হয়। এমন অন্তত চারটি সংগঠন সক্রিয় আছে। একটি কে দিলে দ্বিতীয় পক্ষ আসে। দ্বিতীয় পক্ষকে দিলে তৃতীয় পক্ষকে দিতে হয়। নয়তো তারা ঠিকভাবে কাজ করতে দেয় না। আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যায় তাদের অত্যাচারে। এভাবে প্রত্যেক গোষ্ঠীকে আলাদা আলাদা ভাবে চাঁদা দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করতে হয়। এটাই এখানকার দীর্ঘদিনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর বাইরে কেউ যেতে চাইলে মৃত্যুই তার নির্ধারিত ভবিষ্যত।’

স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, চাঁদাবাজি হয় তা সত্য। কিন্তু তা সহনীয় মাত্রায় আছে। কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে গত দুই দশকে পার্বত্য জেলাগুলোতে অন্তঃকোন্দল ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। স্থানীয়দের জিম্মি করার পাশাপাশি আঞ্চলিক সংগঠনগুলো প্রায়’ই নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এসব সংঘর্ষে ব্যবহৃত হয় অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। এসব অস্ত্রের উৎস এবং দেশী বিদেশী বিভিন্ন নেটওয়ার্কের যোগসাজশ নিয়েও প্রশ্ন তুলেন সচেতন মহল।

প্রসঙ্গগত, গত তিন বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতো খুন হয়েছেন তিনশ’র অধিক মানুষ। অহরহ ঘটছে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও ধর্ষণ পরবর্তী খুনের ঘটনা। এই অবস্থায় সবুজের অনিন্দ্য সুন্দর ভূমি পাহাড়ি জনপদ পরিণত হচ্ছে রক্তাক্ত প্রান্তরে।

উল্লেখ্য ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের সাথে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে অন্যতম স্বাক্ষরকারী ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। শুরুতে এই চুক্তিকে পার্বত্য জেলায় বসবাসরত সকল বাঙালি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও আঞ্চলিক সংগঠনগুলো স্বাগত জানালেও পরবর্তীতে সংগঠনগুলো স্বরুপে ফিরে আসে। বর্তমানে তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম কে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন “জুম্মল্যান্ড” প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এবং বিভিন্ন বলয়ে বিভক্ত হয়ে একপ্রকার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে তিন পার্বত্য জেলা জুড়ে।

ওয়াইএইচ / বে অব বেঙ্গল নিউজ / Bay of Bengal news

বে অব বেঙ্গল নিউজ - Bay of Bengal News

বে অব বেঙ্গল নিউজ