সারাদেশ

কিশোরী বধূ শারীরিক সম্পর্কে রাজি না থাকায় মারধর | কৌশলে স্বামীর হাত বেঁধে হত্যা

কিশোরী বধূ অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী (১৫)। তার ইচ্ছের বিরুদ্ধেই বিয়ে দেয়া হয় ২৮ বছরের যুবক হারুন অর রশিদের সঙ্গে। স্বামীকে পছন্দ না হওয়ায় হয়নি শারীরিক সম্পর্ক। পরে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাওয়ায় কৌশলে স্বামীর হাত বেঁধে স্বামীকেই হত্যা করে বসেন কিশোরী বধূ।
কিশোরী বধূ শারীরিক সম্পর্কে রাজি না থাকায় মারধর | কৌশলে স্বামীর হাত বেঁধে হত্যা
কিশোরী বধূ শারীরিক সম্পর্কে রাজি না থাকায় মারধর | কৌশলে স্বামীর হাত বেঁধে হত্যা

পরে তাকে আটকের পর আদালতে দিয়েছেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও।

মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাতে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার জাহানবাদ ইউনিয়নের বিষহরা গ্রামের এই ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় আদালত মেয়েটিকে কারাগারে পাঠিয়েছে।

মোহনপুর থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম জানান, মাত্র ২৭ দিন আগে জাহানাবাদ ইউনিয়নের বিষহারা গ্রামের বয়জুল মন্ডলের ছেলে হারুন অর রশিদের সঙ্গে একই ওই কিশোরীর বিয়ে হয়। কিন্তু এই বিয়েতে তার মত ছিলো না। স্বামীকেও সে পছন্দ করেনি। তাই বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে সে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেনি। গত মঙ্গলবার ভোরে স্ত্রীর সঙ্গে শারিরিক সম্পর্ক করতে চান হারুন।

এসময় ওই কিশোরী রাজি না হলে হারুন তাকে চড় থাপ্পর মারেন। পরে ওই কিশোরী বধূ সুকৌশলে শর্ত দেয় শারীরিক সম্পর্ক করতে হলে হারুনের হাত বাঁধতে হবে। 

তিনি বলেন, স্ত্রীর শর্তে হারুন রাজি হন। তখন ওই কিশোরী দড়ি দিয়ে স্বামীর হাত বেঁধে দেয়। পরে সে স্বামীর গলায় আরেকটি দড়ি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে টানতে থাকে। এক পর্যায়ে হারুন অচেতন হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি টের পেয়ে তাদের ডাকতে থাকে। কিন্তু এসময় ব্যাগ গুছিয়ে ওই কিশোরী পালানোর চেষ্টা করে। পরে হারুনকে স্বজনরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত হারুনের বোন সুমাইয়া খাতুন জানান, রাত ১ টা নাগাদ তার ভাইকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। রাত ৩ টা পর্যন্ত হারুনের স্ত্রী লাশের সঙ্গেই ছিল। ৩ টার দিকে সে শ্বাশুড়ির সঙ্গে সেহরি রান্না করতে আসে। রান্না শেষ হলে সে একাই খেতে বসে। তখন তার শ্বাশুড়ি ছেলেকে ডাকতে বলেন। কিন্তু মেয়েটি যায়নি। তখন হারুনের মা তাকে ডাকতে যান। গিয়ে দেখেন- গরমের মধ্যে হারুনের শরীর কম্বল দিয়ে ঢাকা। কম্বল সরিয়ে দেখেন, হারুনের কোন সাড়াশব্দ নেই। এ সময় তাকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। তখন চিকিৎসক জানান, অনেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ওই কিশোরী আদালতে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে এই বক্তব্য দিয়েছে। বুধবার রাজশাহীর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারকের কাছে ওই কিশোরী জবানবন্দি দেয়। বিচারক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।’

তিনি আরো বলেন, কিশোরীর বয়স ১৫ বছর। তবে বিয়েতে ১৮ দেখানো হয়েছে। এঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে হত্যা মামলা করায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে চার্জশিটের সময় মেয়েটির প্রকৃত বয়স উল্লেখ করা হবে। তখন মেয়েটিকে কিশোর অপরাধের দায়ে কিশোরী সংশোধনাগারে রাখা হবে।’

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানিয়েছে, নিহত হারুনুর রশিদ ওই গ্রামের বয়জুল মণ্ডলের ছেলে। আর মেয়েটি একই উপজেলার ভীমনগর পালশা গ্রামের এর মেয়ে। স্থানীয় একটি মাদরাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত মেয়েটি। গত ১৯ মার্চ হারুনের সাথে তার বিয়ে দেয়া হয়। বয়স কম বলে হারুনের গ্রামে ওই কিশোরীর খালার বাড়িতে বিয়ের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় একজন কাজী বিয়ে পড়ান।

এই বিয়েটি পড়িয়েছিলেন মোহনপুরের জাহানাবাদ ইউনিয়নের সহকারী কাজী আবুল হোসেন শেখ। তিনি বিষহরা উত্তরপাড়া জামে মসজিদের ঈমামও। মোবাইলে আবুল হোসেন প্রামানিক বলেন, তিনি এই বিয়ে পড়াতে চাননি। এক ভাতিজা এসে পীড়াপীড়ি করায় শুধু কালেমা পড়িয়েছেন। মেয়ের বয়স কম হওয়ায় রেজিস্ট্রি করেননি। ভালাম বইয়েও কিছুই লেখা নেই। তিনি বলেন, বিয়ে পড়ানোটা একটা অন্যায় হয়েছে। ভুল হয়েছে।

Bay of bengal news / বে অব বেঙ্গল নিউজ

বে অব বেঙ্গল নিউজ - Bay of Bengal News

বে অব বেঙ্গল নিউজ