চট্টগ্রাম

শিক্ষার আলোই আলোকিত মানুষ হতে চায় চা বিক্রেতা সাকিব

স্বপ্ন পূরণের অনুভূতি কতটা আনন্দের তা আমরা জানি। যদি সেই স্বপ্ন হয় নিজের কাছে অনেকটা অধরা; তার পূর্ণতায় সেই আনন্দ বেড়ে যায় আরো বহুগুণ।

শিক্ষার আলোই আলোকিত মানুষ হতে চায় চা বিক্রেতা সাকিব
শিক্ষার আলোই আলোকিত মানুষ হতে চায় চা বিক্রেতা সাকিব

সাকিব হাসান; বয়সের দিক থেকে একজন শিশু। শিশু হলেও সে একজন যোদ্ধা। বাস্তবিক জীবনের সত্যিকারের নায়ক সাকিব। পেশায় সে একজন চা বিক্রেতা। চা বিক্রি করে প্রতিদিন যা রোজগার তা দিয়েই চলে পরিবার।
ভাবতেই অবাক লাগে যে বয়সে আমরা ভীরের মাঝে মায়ের আঙ্গুল থেকে হাত ছুটে গেলে পথ চিনতাম না ঠিক সেই বয়সেই সাকিবের কাঁধে পরিবারের দায়িত্ব। বাস্তবতার করাঘাতে এভাবেই প্রতিনিয়ত শানিত হচ্ছে সাকিবের জীবন।

কাজির দেউরি আউটার স্টেডিয়াম এলাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে ফ্লাস্ক হাতে দেখা মিলে সাকিবের। তার দৈনিক আয় ৪০০ টাকা। তার মধ্য থেকে ৩০০ টাকা ই ব্যয় হয় ফ্লাস্ক ভাড়া সহ অন্যান্য খরচ মিটাতে। বাকি একশো টাকায় সাকিবের প্রাত্যহিক সম্বল।

প্রতিদিনের ন্যায় সেদিনও সাকিব ফ্লাস্ক হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছিল স্টেডিয়াম এলাকায়। কিন্তু এই সন্ধ্যা ছিল একটু অন্যরকম। সাকিব তখনও জানতো না এই রাত তার প্রাপ্তির রাত। জীবন যুদ্ধে সে নিজেকে যতটুকু বিলিয়ে দিয়েছে এটা হয়তো তারই উপহার ছিল স্রষ্টার পক্ষ থেকে।

চা বিক্রি করতে করতে সাকিবের সাথে দেখা হয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক সাইফুল আলম লিমনের সাথে। উদ্দেশ্য ছিল ঐ চা বিক্রি। কিন্তু সেদিনের গ্রাহক-বিক্রেতার কথোপকথন চা চক্রে সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং ছাড়িয়ে যায় জীবনের ভাব আদান প্রদান পর্যন্ত।

দীর্ঘক্ষণ মনযোগ সহকারে সাকিবের জীবনের গল্প শুনেন লিমন। সবকিছু জানার পর সাকিবের গর্ভধারিণী মায়ের সাথে কথা বলার ইচ্ছে পোষণ করেন সাইফুল আলম লিমন। সাকিবের জন্মদাত্রী মা-ও সেখানে উপস্থিত হন। লিমন সাকিবকে চা বিক্রির জন্য কিনে দেন একটি নতুন ফ্লাস্ক। পাশাপাশি সাকিবের মা কে জানান তিনি (লিমন) সাকিবের পড়ালেখার দায়িত্ব চান।

সাইফুল আলম লিমনের ইচ্ছা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সাকিব যেন সুন্দর সমাজ বিনির্মানে অবদান রাখুক। লিমনের এই কথা শুনে জল যেন ছলছল করছিল সাকিবের চোখে। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার আনন্দে সাকিব যেন পরিণত হয় উচ্ছসিত এক নাবালকে। লিমনের পিতৃত্বসুলভ হৃদয়গ্রাহী ব্যবহারে সেখানে আবির্ভাব হয় এক আবেগঘন পরিবেশের।

আমরা এমন সমাজ ই প্রত্যাশা করি যেখানে সাইফুল আলম লিমনের মতো সমাজকর্মীদের হাত ধরেই হাসি ফুটবে সাকিবের মত হাজারো সুবিধা বঞ্চিত শিশুর মুখে। বিবেকের কষ্টিপাথরে পরিশুদ্ধ হয়ে উন্মোচিত হবে নতুন এক ভোরের। আমরা চাই সত্যিকারের মানুষ হোক সাকিব। ভূমিকা রাখুক আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মানে। সেই সাথে সাকিবদের যারা ভালোবেসে আগলে রাখতে চায়; সেই সাইফুল আলম লিমনেরা সমৃদ্ধ হোক সমহিমায়।

বে অব বেঙ্গল নিউজ - Bay of Bengal News

বে অব বেঙ্গল নিউজ