বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে বন্ধ ক্যাম্পাসের সংসদে বিনা অনুমতিতে ছাত্রলীগের একাংশের মহড়া
মহামারী করোনা ভাইরাসের ছোবলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও হঠাৎ করেই সরকারি কমার্স কলেজের বন্ধ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একাংশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
১৭ জানুয়ারি (রবিবার) প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কমার্স কলেজের বন্ধ ক্যাম্পাসের ছাত্রসংসদ কক্ষে স্লোগান দিচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা, “কমার্স কলেজের মাটি নওফেল ভাইয়ের ঘাঁটি, কমার্স কলেজের মাটি রেজাউল ভাইয়ের ঘাঁটি” বলে স্লোগান দেন। কমার্স ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে পরিচায় দানকারী বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক লুৎফুল এহসান শাহ’র নামেও স্লোগান দিতে শুনা যায় তাদেরকে। এছাড়াও একই দিনে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌস আরা বেগমের সাথেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তারা। সৌজন্য স্বাক্ষাতের একটি স্থির চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়।

এদিকে ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের এমসি কলেজে সংগঠিত ধর্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জনসাধারণের নিষেধাজ্ঞা জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (মাউশি) থেকে চিঠি পাঠানো হয় দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষদের কাছে। এমন নির্দেশনার পরও কমার্স কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা করোনাকালীন সময়ে, কোন স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কিভাবে প্রবেশাধিকার পায় এবং অধ্যক্ষের সাথে সাক্ষাৎ করে তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। ছাত্র সংসদ কক্ষ দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ থাকলেও কিভাবে ছাত্রলীগ সেখানকার চাবি পেলো তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
এ বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌস আরা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওরা কোন অনুমতি নিয়ে আসে নাই। ওরা কি পারমিশন নিয়ে ঢুকে নাকি! ছাত্ররা তো সীমিত পরিসরে আসতেই পারে। কাজে আসতেতো তাদের কোন বাধা নেই’
১৭ তারিখ (রবিবার) সরেজমিনে কমার্স কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় সেখানে অবস্থান করছেন ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলেও তাদের কারো কাছে মাস্ক কিংবা সামাজিক দূরত্ব লক্ষ্য করা যায়নি। অফিস কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিন চারদিন ধরেই কলেজ ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে তারা অবস্থান করছেন। এছাড়াও তাদের অধিকাংশই অছাত্র ও মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্র।
বন্ধ ক্যাম্পাসের সংসদের চাবি কিভাবে পেলো জানতে চাইলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমি কোন চাবি দিই নাই। যা করেছে ওরা নিজেরাই করেছে। ওরা এমন সবসময় আসে। সব কলেজেই এমন আসে, সব প্রতিষ্ঠানেই আসে। ওদের কাজের প্রয়োজনে ওরা আসলে কোন বাঁধা নেই। ওরা আসে, আবার চলে যায়। আমার কাছ থেকে কোন চাবি প্রদান করা হয় নাই।’
চট্টগ্রামের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই দুটি ধারায় বিভক্ত। একটির নেতৃত্বে রয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং অন্য অংশটি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের ধারাটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন।
প্রসঙ্গত ২০১৫ সাল থেকে কমার্স কলেজ ক্যাম্পাসে আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত সাব্বির চৌধুরীর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি ধারা সরব থাকলেও হঠাৎ করেই কলেজের নিয়ন্ত্রণ নেন মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত লুৎফুল এহসান শাহর কর্মী সমর্থকেরা।