ফলোঅনে পাকিস্তান, অ্যান্ডারসনের ৬০০ উইকেট নাটক

ইংলিশ অধিনায়ক জো রুটও হয়তো সেটাই চেয়েছিলেন। ২৭৩ রানে অল আউট হয়ে ফলো-অনে পড়া পাকিস্তানকে আবার ব্যাটিংয়ে ডাকেন রুট। অ্যান্ডারসন দ্রুত মাঠ ছেড়ে দ্বিতীয় ইনিংসের জন্য নতুন বল বাছাই করাও শুরু করেন। কিন্তু আলোকস্বল্পতায় দিনের খেলা ঘোষণা করে আম্পায়াররা। অ্যান্ডারসনের অপেক্ষা বাড়ে। সঙ্গে হয়তো দুশ্চিন্তাও।
চতুর্থ ও পঞ্চম দিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বৃষ্টি সময় কেড়ে নিলে ম্যাচও ছিটকে যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে। পাকিস্তান হয়তো সাউদাম্পটনের বাজে আবহাওয়ার দিকেই চেয়ে থাকবে। তবে পাকিস্তান যে এত দূর আসবে, সেটাই-বা কে আঁচ করতে পেরেছিল! দ্বিতীয় দিন শেষ বিকেলে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে পাকিস্তানের হয়ে লড়ে গেছেন অধিনায়ক আজহার আলী।
অথচ সিরিজের শুরু থেকেই এলোমেলো ছিল আজহার ব্যাটিং। অফ স্টাম্প যেন খুঁজেই পাচ্ছিলেন না পাকিস্তান অধিনায়ক। ব্যাটের দুই পাশ দিয়েই পরাস্ত হচ্ছিলেন ইংলিশ বোলারদের সুইং ও সিম মুভমেন্টে। আজ ভিন্ন আজহারকে দেখা গেল সাউদাম্পটন টেস্টের তৃতীয় দিনে। যখন একের পর উইকেট পড়ছিল, তখন দেয়াল হয়ে দাঁড়ান আজহার। টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৭তম সেঞ্চুরিতে

পাকিস্তানকে মান রক্ষা করেন তিনি। পঞ্চম পাকিস্তানি হিসেবে টেস্ট ক্যারিয়ারের ৬ হাজার রান পূর্ণ করেন।

সঙ্গী হিসেবে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে পেয়েছিলেন। ১৩১ রানের জুটি গড়ে এক সময় স্বপ্ন দেখিয়েছেন আজহার। কিন্তু ফিফটি করে রিজওয়ান বিদায় নিয়ে লোয়ার অর্ডারে আর কেউই দাঁড়াতে পারেনি। আজহার অপরাজিত ছিলেন ১৪১ রানে।

ফলোঅনে পাকিস্তান, অ্যান্ডারসনের ৬০০ উইকেট নাটক
ছবি:সংগৃহীত

শুরু হল অ্যান্ডারসনের ৬০০ উইকেট নাটক। প্রথমে রোরি বার্নস। এরপর জ্যাক ক্রলি। জিমি অ্যান্ডারসনের তখন ৫৯৭ উইকেটে। আর ১ উইকেট হলে টেস্ট ক্রিকেটে ২৯তম পাঁচ উইকেট। ৩ উইকেট হলে ইতিহাস। প্রথম পেসার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ৬০০ উইকেটের মালিক হবে অ্যান্ডারসন।
কিন্তু অ্যান্ডারসনের সতীর্থদের হাত যেন হুট করেই পিচ্ছিল হয়ে উঠল। সেঞ্চুরি করে ফেলা পাকিস্তানি অধিনায়ক আজহার আলীর ক্যাচ ছাড়লেন বার্নস। একই ওভারে মোহাম্মদ আব্বাসের সহজ ক্যাচ ছাড়লেন ক্রলি। অ্যান্ডারসন তখন রাগে রাগে ফুঁসছেন। দুই হাতে মুখ লুকিয়ে চিৎকার করলেন।
দুই ওভার বাদে আবার সুযোগ। এবার অ্যান্ডারসনের বলে মিড অনে ক্যাচ তুললেন আজহার। অ্যান্ডারসনের দীর্ঘদিনের বন্ধু স্টুয়ার্ট ব্রড সেখানে দাঁড়িয়ে। কিন্তু সহজ ক্যাচটি ব্রড যেন দেখতেই পেলেন না! তবে ক্যাচ ফেলে দিয়ে আব্বাসকে ঠিকই রান আউট করতে পেরেছেন ব্রড। অ্যান্ডারসনের তখন মাথায় হাত। সতীর্থ ক্যাচ ফেলার হিড়িক যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। মুখ দিয়ে শুধু বের হলো তিনটি শব্দ, ‘ও মাই গড!’
ভাগ্য মেনে নিয়ে আবার গেলেন বোলিং মার্কে। পরের ওভারে এসে নাসিম শাহকে আউট করেন। এবার তৃতীয় স্লিপে থাকা ডম সিবলি নিচু হয়ে ক্যাচ লুফে নেন। অ্যান্ডারসন পেলেন ৫ উইকেট, কিন্তু ২৯তম পাঁচ উইকেট পাওয়ার পর কোনো উদ্‌যাপন করলেন না। ৬০০ থেকে যে আরও ২ উইকেট দূরে অ্যান্ডারসন! পাকিস্তান আবার ব্যাটিংয়ে নামলেই যদি দুটি উইকেট পেয়ে যান, তাহলে সাউদাম্পটনের তৃতীয় দিনই ইতিহাস গড়া হবে আধুনিক ক্রিকেটের এই কিংবদন্তি পেসারের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *