সকল সংবাদঅন্যান্যখোলা চিঠিচট্টগ্রামজাতীয়রাজনীতিশিক্ষাঙ্গণ

শেখ হাসিনার কাছে চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ কর্মীর খোলা চিঠি

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন চট্টগ্রাম সরকারী কমার্স কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী ফায়েজ মোনতাছির চৌধুরী মাহিয়ান। মাহিয়ানের ফেসবুক ওয়ালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরারবর লেখা একটি খোলা চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

শেখ হাসিনার কাছে চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ কর্মীর খোলা চিঠি
শেখ হাসিনার কাছে চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ কর্মীর খোলা চিঠি

মাহিয়ানের ফেসবুক ওয়াল থেকে স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

“প্রিয় নেত্রী বঙ্গবন্ধু তনয়া,

আদর্শিক চেতনার প্রিয় পাঠাগার, নান্দনিক বাংলার রূপকার, পদ্মা মেঘনার মোহনায় জমাট বাঁধা আবেগে’র কেন্দ্রবিন্দু সালাম গ্রহণ করবেন।

করোনাকালে যখন সারা পৃথিবী লণ্ডভণ্ড; তখন আপনি বাংলাদেশকে আলোর পথ দেখিয়েছেন। আপনার সাহসী পদক্ষেপে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি। তার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন।

যখন মানুষ চিনার মতো বয়সটুকু হলো তখন দেশে তত্বাবধায়ক সরকার। পিতামাতার কড়া শাসনের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। ঘরের টিভিতে একটি মাত্র টিভি চ্যানেল ই দেখা যেতো। দেখতাম একটি কালো ভ্যানিটি ব্যাগ, শিমুল তুলোর মতো সাদা একটি কাপড় আর চারপাশে পুলিশি বলয়ে আবৃত আপনি হেঁটে যেতেন আদালতের সিড়ি বেয়ে। আমি সেসময় জানতাম না আপনি নির্দোষ নাকি দোষী। জানার বয়স আমার তখনও হয়নি। কিন্তু যখন’ই দেখতাম অজানা কারণে মনের ইষাণ কোণে একটি পাথর চাপা ব্যথা অনুভূত হতো। সেই ছোট্ট বয়সে মনে হতো বাঙালি নারীর চিরাচরিত রূপটি যেন বন্দী হয়ে গেছে কোন অশরীরী শক্তির হাতে।

এরপর সময় গড়ালো। আপনি মুক্ত হলেন। গণমানুষের ভালোবাসা আপনাকে কনডেম সেল থেকে গণভবনে পৌঁছে দিয়েছে। ২০০৮ সালে জয় লাভের পর আপনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। কি এক দারাজ কন্ঠে অবিচল দুঃখী মেহনতি মানুষের কথাগুলো আপনি বলে যান। অবাক বিষ্ময়ে আমি দেখতাম।

বয়সের সাথে সাথে যখন জানলাম, আপনি মহাকালের মহারাজা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’র রেখে যাওয়া শেষ আমানতের একটি; যখন জানলাম আপনার পুরো পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি; যখন জানলাম আপনি শত বাঁধা উপেক্ষা করে এদেশে এসেছেন পিতার অসম্পূর্ণ স্বপ্ন তথা বাঙালি জাতি’র মুখে হাসি ফুটানোর অদম্য ইচ্ছা নিয়ে; যখন জানলাম গ্রেনেডের সামনে দাঁড়িয়েও আপনি আমাদের হাত ছেড়ে চলে যান নাই তখন আপনার প্রতি সম্মান আকাশ ছুঁয়েছে। এখন আর বিটিভি দেখা লাগে না। কিন্তু সেই অনুভূতি এখনও দাগহীন অমলিন রয়ে গেছে ভালোবাসার প্রিয় নেত্রী।

আওয়ামী লীগ নিয়ে আমার যতটুকু পড়াশোনা এটিকে আমি আদর্শিক চর্চার আঁতুড়ঘর হিসেবেই জানি। আমি জানি আওয়ামী লীগের প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই ভূখন্ডের মানুষের জন্য নিজের সমস্ত টুকু বিলিয়ে দিয়েছেন। আমি জানি আওয়ামী লীগ সরকার ই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে। আমি জানি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সংখ্যালঘুদের অজানা শঙ্কায় আতঙ্কিত থাকা লাগে না। আমি বিশ্বাস করি, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার মতো দৃঢ়তা একমাত্র শেখ হাসিনা’র ই আছে। আমি বিশ্বাস করি চেষ্টা থাকলে একমাত্র আওয়ামী লীগ ই ক্ষমতা রাখে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রেক্ষাপটে একটি সমৃদ্ধশালী স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানের।

তবে একটা কিন্তু আছে মাননীয় নেত্রী। দল দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। আদর্শিক কর্মীদের বিপরীতে দূর্বৃত্তরাও ঢুকে পড়েছে গণহারে। ধর্মনিরপেক্ষ নীতির বিপরীতে সাইদী, আজহারী, মামুনুলের অনুসারীও মিশে গেছে ভীরের মাঝে। গতকাল দেখলাম একজন লোক বাবুনগরী কে তার কোন ব্যক্তিগত কারণে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। তিনি ধন্যবাদ জানাতেই পারেন। কিন্তু যখন দেখি তিনি একটি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা; তখন আর কিছু বলার মতো শব্দ মস্তিষ্কে থাকে না! বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য ভেঙে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া লোকদের প্রতি যদি আওয়ামী লীগের একজন নেতা ভালোবাসা প্রকাশ করে তাহলে মাননীয় নেত্রী আমার বিনীত প্রশ্ন- আমাদের সেই আদর্শ কি মরে গেছে??

মৌলিক এই সমস্যার বাইরে আরো বহু সমস্যায় জর্জরিত প্রিয় প্রতিষ্ঠান। আপনি ক্ষমতাভার গ্রহণ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেশনজট মুক্ত করেছেন। কিন্তু আপনার ভ্যানগার্ড খ্যাত ছাত্রলীগ সেশনজটের স্টিমরোলারে পিষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আপনি বেকারত্ব হ্রাসের জন্য নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। কিন্তু আপনার কর্মীরা একটি পরিচয়ের অপেক্ষায় স্বেচ্ছায় ক্যারিয়ার বিমুখ হয়ে বসে থাকে বছরের পর বছর। ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের ব্যক্তিগত জীবন, পরিবার ও সর্বোপরি রাষ্ট্র। গ্রুপিং রাজনীতির পদাঘাত চূর্ণ বিচূর্ণ একটি সমৃদ্ধ ঘর। টং দোকানের চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় রাজনীতি’র মূখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধান্দাবাজরা এলাকা ভাগ করে মেতে উঠেছে লুটপাটের রাম রাজত্বে। দলের আদর্শিক কোন কর্মী বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে তাকে চিরতরে সরিয়ে দিতে হাত কাঁপে না!! সংগঠনের পদবী দায়িত্বের চেয়ে বেশী প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মেশিনে পরিণত হয়েছে।

হেফাজত নিয়ে এতো কথা! হেফাজতে তান্ডবের বিপরীতে একজন লোক লাইসেন্সধারী অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিবাদ করেছিলো। তার পরিণতি কি হয়েছে? প্রিয় নেত্রী হয়তো আপনাকে জানতে দেওয়া হয় নাই- আপনার সেই কর্মীর অস্ত্রের লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া হয়েছে! সেদিনের সেই অস্ত্র হাতে ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে তাকে সন্ত্রাসী বানানো হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন- হেফাজতের আস্ফালন ই কি স্বাভাবিক নয়? দলের পরীক্ষিত কর্মীদের ভবিষ্যত যদি এই হয়- তাহলে আদর্শহীনদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবে কে?

যুবলীগের কমিটিতে বিরোধী আদর্শের লোকেরা স্থান পায়। ছাত্রলীগের কমিটি হলেই অভিযোগ উঠে বিবাহিত ও অছাত্র পদায়ন, টাকা লেনদেনের। কয়দিন আগেই একটি উপজেলা কমিটিকে কেন্দ্র করে জেলার শীর্ষ নেতার টাকা লেনদেনের অডিও রেকর্ড পর্যন্ত ফাঁস হয়। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, সোনার দেশ গড়তে হলে, সোনার মানুষ হতে হবে। সেই স্বপ্নের সোনার মানুষ গড়ার বিদ্যালয় ‘ছাত্রলীগ’ আজ চুরি হয়ে গেছে আদর্শহীন দস্যুদের কাছে।

মাননীয় নেত্রী আপনি দলের ভিতরে শুদ্ধি অভিযানের উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা সাধুবাদ জানিয়েছি। আমরা ভেবেছিলাম লুটেরাদের এবার নিস্তার নেই। কিন্তু আপা; দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে বলতে হয় “শুদ্ধি অভিযানও” লুট হয়ে গেছে দূর্বৃত্তদের অপরাজনীতির কাছে। জায়গা জমির বিরোধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দিয়ে যেমন চরিত্র হনন করা হয়; ঠিক তেমনি আওয়ামী লীগের ত্যাগী কর্মীদের ঘায়েল করার হীন চক্রান্তে লিপ্ত মুখোশধারী হাইব্রিড রাজনীতিবিদরা। তারা জানে আওয়ামী লীগের শক্তি তার কর্মীরা। মমতাময়ী নেত্রীর জন্য কর্মীরা জীবন দিতে দ্বিধাবোধ করে না। তাই প্রকৃত কর্মীদের ধ্বংস করার মধ্য দিয়েই তারা পরাজিত করতে চায় আপনাকে এবং আওয়ামী লীগ’কে।

প্রিয় নেত্রী; দলীয় কমিটি গঠনে জামাত বিএনপি পদায়ন হচ্ছে হরহামেশাই। একসময় যে শিবিরের ক্যাডার ছিলো তার নেতৃত্বে এখন উপজেলা, জেলায় গ্রুপ পরিচালিত হয়। বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত সাবেক শিবির নেতার ব্যানারে ব্যানারে ছেঁয়ে যাচ্ছে শহর, বন্দর, দেশ। প্রকৃত কর্মীরা আজ অসহায়। তাদের কাছে অর্থ নেই; অস্ত্র নেই; পেশীশক্তি নেই; কিন্তু আছে আপনার প্রতি অদম্য আনুগত্য। মিছিল-মিটিং, সমাবেশ, কমিটিতে তাদের দাওয়াত কিংবা স্থান না হলেও আপনার আহ্বানে জীবনযুদ্ধে শহীদ হতে তারা সদা প্রস্তুত। আওয়ামী লীগ এই নিষ্পেষিত নির্যাতিত কর্মীদের ই দল। এদের ঘাম রক্তের উপর ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে সংগঠন। এদের অনূভুতি’র সাথে বেইমানি করে চূড়ান্ত সফলতা আসবে না। প্রিয় নেত্রী আপনিই বলেন, ‘ক্ষমতা কখনো চিরস্থায়ী নয়; দলের কর্মীরাই দলের প্রাণশক্তি।’ তাই আকুল আর্জি প্রকৃত কর্মীদের খুঁজে বের করে তাদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার।

আমি জানিনা আমার কথা আপনার কান পর্যন্ত পৌঁছাবে কি না! না পৌঁছানো’টাই স্বাভাবিক। কভরী রাকসান্দ’রা এখন গণভবনে গিয়ে মিথ্যা প্রসংশা’র ফুলঝুরি নিয়ে আপনার সামনে হাজির হয়। শাহেদ’রা আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড লাগিয়ে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়। অথচ কর্মীদের বোবাকান্না আপনার কাছে পৌঁছতে দেয় না এক শ্রেণীর ধান্দাবাজেরা। যদি আপনি সত্য জেনে যান; এদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে সেই ভয়ে! তারপরও আমরা বলে যাই। কারণ বিশ্বাস করি আপনার প্রতিটি কর্মীই আপনার সন্তানের মতো। তাই সন্তান হিসেবে মায়ের কাছে সাহস করে কথা বলা।

প্রিয় নেত্রী দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। হাজার হাজার কর্মীর দরকার নেই। আদর্শিক একজন’ই যথেষ্ট। আপনাকে যখন বেআইনিভাবে কারারুদ্ধ করা হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ৫০ জন নিয়ে মিছিল করেছে। আপনার মুক্তির দাবিতে নির্যাতনকে বরণ করেছে হাসি মুখে। সেই দুঃসময়ের কর্মীরাই দলের সম্পদ; যারা ভোগ করতে আসে নাই, ভালোবাসার টানে এসেছে। অবাধ্য আদর্শহীন লোকেরা কখনো ভাল কিছু বয়ে আনবে না। বরং লুটপাট করে ধ্বংস করে দিবে সাজানো বাগান। আমরা স্বপ্ন দেখি আপনি আমৃত্যু বাংলাদেশকে পথ দেখাবেন জনগণের গনরায় নিয়ে। আমরা আশা করি যতদিন এই পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র থাকবে ততদিন মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে আওয়ামী লীগ। তাই আপনার কাছে আকুল আবেদন- চিকিৎসা’র মাধ্যমে ক্যান্সারকোষগুলো বিতাড়িত করে স্বরুপে ফিরিয়ে আনবেন প্রাণের সংগঠনকে।

পরিশেষে আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। ভালো থাকবেন আমাদের হৃৎস্পন্দন প্রিয় শেখ হাসিনা আপা। আপনি ভালো থাকলেই আমরা ভাল থাকি; আপনার চলার পথকে মসৃন করতেই জীবন বাজি রাখি।

ফায়েজ মোনতাছির চৌধুরী মাহিয়ান
কর্মী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সরকারি কমার্স কলেজ শাখা।”

বে অব বেঙ্গল নিউজ / bay of bengal news / BBN / বি বি এন