২ বছরেও নেই অগ্রগতি কুমিল্লায় ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন হত্যা মামলার
কুমিল্লাঃ কেটিসিসিএ লিমিটেডের পরিচালক ও কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ২ বছরেও অধরা খুনিরা। দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই মামলার। থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের তদন্তের পর এখনও মামলাটি তদন্ত করছেন পিবিআই কুমিল্লা শাখা। এজাহারভুক্ত দুই আসামি কাউসার ও রেজাউল এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদিকে সরব রয়েছে খুনিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। পরিবার ও এলাকাবাসী ও স্থানীয়দের প্রশ্ন খুনিরা কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে কিভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন? নিহত দেলোয়ারের রয়েছে ৫ বছর বয়সী শিশু সন্তান রাইয়ান ও ২ বছর বয়সী সাফওয়ান। তারা এখনো বাবাকে খোঁজে বেড়ায় বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে। মাঝ রাতে ওরা প্রায়ই জেগে উঠে আর অস্থির হয়ে উঠে বাবার খুঁজে। তারা জানে না তাদের বাবা যে আর কোনও দিন ফিরে আসবে না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৬ই নভেম্বর ২০১৮ সালের রাতে স্থানীয় ২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস ছাত্তারের কার্যালয়ে হাজী বাহার এমপির নির্বাচনী সভা শেষে শেষে নিজের বাড়ি ফেরার পথে রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টায় তার নিজ বাড়ির কাছাকাছি শামবক্সি (ভল্লবপুর) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে রাস্তার উপর কয়েকজন দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেল কিংবা বাইক যোগে এসে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনকে খুবই কাছ থেকে মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। এ সময় গুলিবিদ্ধ দেলোয়ারকে আহত অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানিয় এলাকাবাসী। তাকে মৃত ঘোষণা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক। দেলোয়ার হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর দিন বিকালে নহত দেলোয়ারের বড় ভাই মো.শাহাদাত হোসেন নয়ন সদর দক্ষিণ থানায় বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় শামবক্সী (ভল্লবপুর) গ্রামের আবুল কালামের পুত্র কাউছারসহ (২৮) ও আবদুর রাজ্জাকের পুত্র রেজাউল করিম (৩৫) অজ্ঞাতনামা অনেককে আসামি করা হয়। দেলোয়ারের মনোমানিল্য ও বিরোধ ছিল সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কারণে বিভিন্ন জনের সঙ্গে। এলাকাবাসী ও সহকর্মীদের ধারণা দেলোয়ারকে খুন করা হয় এসব বিরোধের জের ধরে। নেপথ্যে অনেক অজানা রহস্য রয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে স্থানীয় অনেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, দেলোয়ার ছিলেন একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। তারা একজন পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক কর্মী দেলোয়ারকে ভুলতে পারছে না। দেলোয়ার হোসেন ছিলেন তার ছাত্রজীবনে ভালো সংগঠক হিসেবে পরিচিত মুখ। তিনি অর্থাৎ নিহত দেলোয়ার দীর্ঘ সময় ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিলেন। নিহর দেলোয়ার জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক হয়েছিলেন ও পরে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। আর তার ছাত্রজীবন থেকেই তিনি মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারী ও কর্মী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তিনি ছাত্র রাজনীতি থেকে বিদায় নেন ২০১০ সালে। তিনি কেটিসিসিএ লিমিটেডের সরকার মনোনীত পরিচালক ছিলেন ও হাউজিং এস্টেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক ছিলেন। দেলোয়ারের সাথে কুমিল্লার সব পেশার মানুষের সঙ্গে ছিল গভীর ও নিভিড় সম্পর্ক। এদিকে এলাকাবাসী ও দেলোয়ারের সহকর্মীদের প্রশ্ন খুনি রেজাউল পর পর দুইটি খুন করে পার পেয়ে যাওয়ার কারণে দেলোয়ারের মতো একজন পরিছন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে হত্যার সাহস পেয়েছে। এলাকাবাসীর ধারনা খুনের নেপথ্যে জড়িত থাকতে পারেন একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি। স্থানীয়রা আরও জানান, দেলোয়ারকে খুনের পর পরই রেজাউল মোবাইলে কল করে জানিয়েছিল কোন এক ব্যক্তিকে “চাচা কাজ শেষ”। এখনো রহস্য র্যে গেলো, কে এই চাচা?
মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেছিল সদর দক্ষিণ থানা পুলিশ। মামলাটি স্থানান্তর করা হয় পরে ডিবিতে। সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে প্রথমে গ্রেফতার হয় দেলোয়ারের প্রতিবেশী ঘাতক রেজাউলের সহযোগী সোহাগ (২৮)। রেজাউলের চাচাতো ভাই শাহাদাৎ (৩২) পরে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। কয়েক মাস কারাগারে থাকার পর বর্তমানে দুইজনই আসামীই জামিনে রয়েছেন বলে জানা যায়।
নিহত দেলোয়ারের স্ত্রী জিলকজের নেছা ও বড় ভাই মামলার বাদী মো.শাহাদাত হোসেন নয়ন বে অব বেঙ্গল নিউজকে জানান, কুমিল্লার মানুষের একটি আস্থার জায়গা হাজী বাহার উদ্দীন এমপি। হাজী বাহার এমপি বটবৃক্ষের মতো ছায়া হয়ে আমাদের পরিবারের পাশে রয়েছেন। আমাদের পাশে না তিনি থাকলে মামলা তুলে নিতে বাধ্য হতাম বহু আগে খুনিদের বিচারতো দূরের কথা।একদিন না একদিন হবেই দেলোয়ার হত্যার বিচার।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক মো. মতিউর রহমান বলেন, মাস খানেক হবে মামলাটি পিবিআইতে এসেছে। অতি গুরুত্বসহকারে চাঞ্চল্যকর মামলাটি তদন্ত চলছে। আস্থা রাখুন পিবিআই এর ওপর। একটু সময় লাগলেও ইনশাআল্লাহ দেলোয়ার খুনের রহস্য উদঘাটন হবে।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ঘাতকরা কুমিল্লা সীমানা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যায় ঘটনার পরপরই । তাদের ভারতীয় ভুয়া নাগরিকত্ব নেওয়া ছিল আগেই। চোরকারবারি ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় সীমান্তবর্তী অবাধে তারা ভারতে আসা-যাওয়া করত। বর্তমানে ওরা ভারতীয় পাসপোর্ট ভিসা করে প্রায়ই দুবাই আসা-যাওয়া করছে। কুমিল্লার বেশ কয়েকজন কাউসার ও রেজাউলকে দুবাইয়ে ঘুরতে দেখেছেন। দেশে না থাকার কারণে তাদের কাওকেই ধরা যাচ্ছে না। খুনিদের ধরতে পারলেই হয়তবা রহস্য উদঘাটন সহজ হবে খুনের।
কুমিল্লা / বে অব বেঙ্গল নিউজ / bay of bengal news / bbn