আন্দোলন করে সরকার পতন ঘটিয়ে সরকারে বসে যাবেন, এ চিন্তা বাদ দিতে হবেঃ নওফেল

আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক পুলিন দে’র মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ‘অধ্যাপক পুলিন দে স্মৃতি সংসদ’ আয়েজিত স্মরণ সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিরোধী দলের উদ্দেশে নওফেল বলেন, “আন্দোলন করে সরকার পতন ঘটিয়ে সরকারে বসে যাবেন, এ চিন্তা বাদ দিতে হবে। সরকার এক সময় শাসন করত, এখন জনগণের সেবা করে। নেত্রী সরকারকে গণমুখী করেছেন।”
চট্টগ্রাম-৯ আসনের সাংসদ নওফেল বলেন, “অধ্যাপক পুলিন দে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে চট্টগ্রামে দলের ভিত্তি মজবুত করতে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে কাজ করেছেন। নেত্রী (শেখ হাসিনা) এখনও পুলিন দে’কে স্মরণ করেন।
“পুলিন দে আজ নেই, কিন্তু সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীর মনে আছেন। উনাদের সান্নিধ্য পেয়ে অনেক ত্যাগী নেতার জন্ম হয়েছে। উনাদের ত্যাগের কারণেই দল আজ ক্ষমতায়।”
দলীয় পদ ব্যবহার করে যারা অন্যায় সুবিধা নিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে নওফেল বলেন, “চট্টগ্রামে কারা সিন্ডিকেট করে অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছে, তাও সবাই জানে। সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পয়সা দিয়ে সবখানে ঢুকে যাবার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। সেটা রুখে দিতে হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে নগর কমিটির উপদেষ্টা একেএম বেলায়েত হোসেন বলেন, “পুলিন দে জীবনের ১২টি বছর জেলে কাটিয়েছেন। উনার পরিবার ছিল আওয়ামী লীগ। উনাদের থেকে শিক্ষা নিতে হবে। নিজের স্বার্থে আমরা যেন দলকে যেন ব্যবহার না করি।”
নগর কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক ছিলেন অধ্যাপক পুলিন দে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন আজীবন। ব্যক্তিজীবনে সাংসারিকও হননি। উনার সংসার ছিল দলীয় নেতাকর্মী।
জাসদ স্থায়ী কমিটির সদস্য ইন্দু নন্দন দত্ত বলেন, “ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে না পারলে বাংলাদেশ কখনও স্বাধীনতার মূল্যবোধের পথে থাকতে পারবে না। রাজনৈতিক দল ও সরকার পৃথক দুটি বিষয়।
“ক্ষমতায় গিয়ে শুধু নিজেদের জনগণের প্রতিপক্ষ বানিয়ে নিলে হবে না। সরকার কি করছে তা খেয়াল না করে রাজনৈতিক দলকে জনগণের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে যেতে হবে। সামাজিক দাবিতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তি মাঠে নামলে সমাজ বিরোধী সাম্প্রদায়িকরা ভেসে যাবে।”
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, “শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাইছেন, তারেক জিয়ার কাছে মা-বোনরা নিরাপদ হয়ে যাবে? অধিকার আদায়ে রাজপথে দাঁড়ানোর যাদের সাহস নেই তারা অন্ধকারের ষড়যন্ত্র করছেন।”
নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল সভায় বলেন, ২০০৮ থেকে ২০২০ এই সময় যারা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে এসেছেন তারা সরকারের আশির্বাদপুষ্ট হয়ে পদে এসেছেন। তাই লড়াই-সংগ্রামের অতীত নেতৃত্বের সঙ্গে তাদের একটা তফাত এসে গেছে।
“শুধু বেনিফিশিয়ারি হিসেবে এসে যদি পদে বসে যায়, সে সংগঠনের গুরুত্ব বুঝবে না। নেতৃত্বে আসীন করার আগে তাদের যোগ্য করতে হবে। পাজেরোর ধাক্কায় আজ আমাদের সরে যেতে হয়। পাজেরোতে আমাদের আগ্রহ নেই। সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনই লক্ষ্য।”
নগর কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আজ যা দেখি শুনি, দারুণ মর্মাহত হই। সহকর্মী রিক্রুটের সময় দেখে নেবেন। সবাই জোয়ার দেখছেন, ভাটার টান দেখেননি। ভাটার সময় কেউ থাকবে না।”
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক দেবাশীষ গুহ বুলবুল বলেন, “গুণী লোক সম্মান পেলেই গুণী লোকের জন্ম হয়। কারও স্মৃতি হারিয়ে যাবে কারও স্মৃতি থাকবে সেটা তো হয় না। এ অনুষ্ঠান মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে হওয়া উচিত ছিল।”
সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান বলেন, “আমরা পুলিন দে কে যথাযথ সম্মান জানাতে ব্যর্থ হয়েছি। এ দায় আমাদের নিতে হবে। আমাদের গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে যারা ত্যাগী নেতৃত্ব ছিলেন তাদের সম্মান জানাতে হবে।”
সম্পাদমণ্ডলীর সদস্য চন্দন ধরের সঞ্চালনায় সভায় মুক্তিযোদ্ধা অমল মিত্র, নগর কমিটির সহ-সভাপতি সুনীল সরকার ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চুসহ ১৪ দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
বে অব বেঙ্গল নিউজ/ BAY OF BENGAL NEWS