মাগুরায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন মাগুরা রিপোর্টার্স ইউনিটি
মোঃ রাব্বি হোসেন সৌমিকঃ দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা ধরে নির্যাতন, হয়রানি, হেনস্তা ও শ্বাস রোধ করে হত্যা প্রচেষ্টার পর ‘তথ্য চুরি’র অভিযোগে মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন মাগুরা রিপোর্টার্স ইউনিটি (এমআরইউ) নেতৃবৃন্দ।
মাগুরা রিপোর্টার্স ইউনিটির আয়োজনে বুধবার (১৯ মে) সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে সকাল ১১টায় এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মাগুরা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি এইচ এন কামরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইউনুছ আলী, সহ-সভাপতি মোঃ আলী আশরাফ, কার্যকারী সদস্য শাহীন খন্দকার, দৈনিক শ্যামবাজার পত্রিকার মাগুরা জেলা প্রতিনিধি সুজন মাহমুদ, দৈনিক মাগুরার কথার সম্পাদক আশীষ সাহা জনি, দৈনিক পর্যবেক্ষণ পত্রিকার মাগুরা জেলা প্রতিনিধি শামীম মৃধা, দৈনিক গণমুক্তি শ্রীপুর উপজেলা প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম টোকন, দৈনিক সময়ের আলো শ্রীপুর উপজেলা প্রতিনিধি জাহিদুল ইসলাম জুয়েল ও মানবাধিকারকর্মী জামান মাহমুদ।
মাগুরা রিপোর্টার্স ইউনিটির এই মানববন্ধনে একাত্বতা পোষণ করেন মাগুরা জেলা মহিলা পরিষদ। মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান করেন সংগঠনের সভাপতি মমতাজ বেগম ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দীপিকা দত্ত।
অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক তরুণকন্ঠ ও দি মুসলিম টাইমস পত্রিকার মাগুরা জেলা প্রতিনিধি ফারুক আহম্মেদ, দৈনিক দেশেরকন্ঠ পত্রিকার (শ্রীপুর) ও সাপ্তাহিক বাংলার বর্ণমালা পত্রিকার মাগুরা জেলা প্রতিনিধি মোঃ মিরাজ শেখ, দৈনিক দেশেরকন্ঠ পত্রিকার মাগুরা জেলা প্রতিনিধি খন্দকার নজরুল ইসলাম মিলন, দৈনিক একাত্তর বাংলা পত্রিকার মাগুরা জেলা প্রতিনিধি আব্দুর রশিদ মোল্লা, সাপ্তাহিক বর্জ্যকলমের ইমান উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মিরাজ হোসেন, দৈনিক আজকের জনবাণী শ্রীপুর প্রতিনিধি মোঃ রাশিদুল ইসলাম, মহম্মদপুর প্রতিদিন সম্পাদক সেতু, দৈনিক পর্যবেক্ষণ শামীম হোসেন এছাড়া অন্যান্য সাংবাদিক সহ সুশিল সমাজের ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে মাগুরা রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি এইচ এন কামরুল ইসলাম এঘটনাকে উদ্বেগজনক, মুক্ত ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ওপর চরম আঘাত হিসেবে উল্লেখ করেন।
উপস্থিত নেতৃবৃন্দরা বলেন, রোজিনা ইসলামকে পৈচাশিক নির্যাতন, নিপীড়ন করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায়বাকরুদ্ধ এবং সাংবাদিকদের কলম থামানো যাবে না বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কলম আরো সোচ্চার থাকবে। তারা বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর হামলা ও নির্যাতনের যে চিত্র এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাতে নিশ্চিত করে বলা যায় রোজিনা ইসলামের দুর্নীতিবিরোধী সাংবাদিকতার ফলে স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যক্তিগতভাবে অবৈধ সুবিধা হারাচ্ছেন। একারণেই এমন ন্যাক্কারজনক ও সুপরিকল্পিত নির্যাতন ও হেনস্তা করা হয়েছে।
এমআরইউ নেতৃবৃন্দ মনে করেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লাগামহীন দুর্নীতি, নিয়োগে অনিয়ম, কভিডকালীন কেনাকাটায় দুর্নীতি ও অনিয়মসহ সার্বিক অব্যবস্থাপনা নিয়ে রোজিনা ইসলাম যে সংবাদগুলো প্রকাশ করেছেন তার ফলশ্রুতিতেই তিনি এই ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার। এই ঘটনায় কোনোভাবেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সচিব দায় এড়াতে পারেন না।
এমআরইউ আরও মনে করে, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তারের ঘটনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘শূন্য সহিষ্ণুতা বা জিরো টলারেন্স’ নীতির সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক এবং এঘটনা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি করার ক্ষেত্রে আরো বেপরোয়া ও ভয়হীন করে তুলবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার-হয়রানি শুধু ব্যক্তি রোজিনার ওপরই হামলা নয় বরং এটি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ওপর চরম আঘাত। রোজিনা ইসলামের ওপর এই নির্যাতন, মামলা, গ্রেপ্তার মানবাধিকারেরও চরম লঙ্ঘন। অতিদ্রুত সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করে এমআরইউ নেতৃবৃন্দ বলেন, বিতর্কিত ‘অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’সহ স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য এমনসব কালাকানুন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে আরো ও উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ব্যক্তিত্ব এবং মাগুরায় নিয়োজিত ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকসহ অংশ গ্রহণ করেন সচেতন নাগরিকবৃন্দ । এ সময় বক্তারা সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।