মশার উপদ্রব | ওষুধের মান ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছেঃ চসিক মেয়র
মশা বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের মানুষদের প্রধান মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।চট্টগ্রাম নগরীতে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে মশার উপদ্রব। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে শুরু করে অভিজাত ভবন পর্যন্ত সর্বত্র মশার উৎপাত বেড়েছে। দিনের বেলাতেও মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে মশারী ও কয়েল ব্যবহার করতে হচ্ছে নগরবাসীর।
কোনো উন্মুক্ত স্থান, ফুটপাতে দাঁড়ালেই মশার অত্যাচারে ঠিকে থাকা যাচ্ছে না।বাড়ি ঘরের ভিতর ও নিস্তার পাওয়া যাচ্ছে না মশার হাত থেকে।
এমনকি মশা নিধনের স্প্রে, কয়েল, ধোঁয়ায় ও নিস্তার পাওয়া যাচ্ছে না মশক বাহিনীর হাত থেকে। এছাড়া মশারির ছিদ্র দিয়ে ঢুকে পড়ছে ছোট ছোট মশা।
সচেতন অভিভাবকরা ঘরে সন্তানদের খেলাধুলা কিংবা পড়ার সময় মশারি টাঙিয়ে দিচ্ছেন।
করোনা মহামারির কারণে লকডাউন চলাকালীন সময়ে ডেঙ্গু আশঙ্কায় মশার উপদ্রব বন্ধে চসিক থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও বর্তমানে গৃহীত কর্মসূচিতে আশানুরূপ ফলাফল আসছে না। মশার ওষুধ ছিটিয়েও মিলছে না নিস্তার।
সরেজমিনে দেখা যায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন নালা-নর্দমা সংস্কারাধীন থাকায় পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে নর্দমার বিভিন্ন স্থানে ময়লা আবর্জনা জমে সেগুলো মশার প্রজনন স্থানে পরিণত হচ্ছে।
এদিকে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় এডিস মশাবাহিত রোগেরও শঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই করোনা মহামারীতে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি নগরবাসীর স্বাস্থ্যের জন্য বাড়তি ঝুঁকি বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নতুন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব গ্রহণের পর মশা মারা ও পরিচ্ছন্নকাজে ১০০ দিনের বিশেষ কর্মসূচি ঘোষণা করলেও দৃশ্যমাণ অগ্রগতি কম।
নগরে কোটি টাকার মশার ওষুধ ছিটিয়ে কমছে না মশার যন্ত্রণা। এতে প্রশ্ন উঠেছে মশার ওষুধের মান নিয়ে। এমন অবস্থায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ছিটানো মশার ওষুধের কার্যকারিতা ও মান নিরীক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষকদের দ্বারস্থ হয়েছেন মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী।
এ অবস্থায় রোববার (১৪ মার্চ) চসিকের ব্যবহৃত মশার ওষুধের কার্যকারিতা ও মান নিরীক্ষণের জন্য মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রক্টর ও অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. রবিউল হোসেন ভূঁইয়া, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. মো. ওমর ফারুক রাসেল ও কাজী নুর সোহাতের সঙ্গে বৈঠক করে সহযোগিতা চেয়েছেন।
এ সময় মেয়র রেজাউল করিম বলেন, আমাদের ব্যবহৃত মশার ওষুধের মান ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাই আমি মশার ওষুধের কার্যকারিতা ও মানের বিষয় বিস্তারিত জানার জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।
কী ধরনের ওষুধ ব্যবহার করলে মশার প্রজনন ক্ষমতা ও মশার উপদ্রব কমবে এবং মশার যন্ত্রণা থেকে নগরবাসী রেহাই পাবে সে বিষয়ে গবেষণা করে পরামর্শ দেওয়ার অনুরোধ জানান মেয়র।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোর্শেদুল আলম চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর উপ প্রধান পরিচ্ছন্নতা বিভাগ মোর্শেদুল আলম চৌধুরী বলেন, চসিক লার্ভিসাইড, অ্যাডাল্টিসাইড ও কালো তেল ব্যবহার করছে মশা নিধনের জন্য।
তিনি বলেন, উড়ন্ত মশা মারার জন্য যে অ্যাডাল্টিসাইড ব্যবহার করছি আমরা সেটি নতুন করে কেনার আগে মেয়র মহোদয় চবির কীটতত্ত্ববিদদের পরামর্শ চেয়েছেন।
আমরা ওষুধের নমুনা পাঠিয়ে দেব বিশ্ববিদ্যালয়ে। উনারা গবেষণা করে কয়েক দিনের মধ্যে ফলাফল ও পরামর্শ জানাবেন। তার ভিত্তিতে মেয়র মহোদয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
তিনি আরো বলেন, মশা নিধনে ১০০ দিনের একটি ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে হেডকোয়ার্টার।এর মধ্যে মশা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত যে কার্যক্রম সেটি চলমান থাকবে।
প্রথম দফায় ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ মার্চ ২০ দিন এবং দ্বিতীয় দফায় ১২ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ২০ দিনের মশার নিধনের ঔষুধ ছিটানোর কাজ চলছে।
মশা নিধনে ২৩৩ জনের একটি টিম কাজ করছে। ৪টি ওয়ার্ডে উপর্যুপরি ২ দিন কাজ করছে ২৩৩ জন লোক।
৪১টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৪ জন করে কর্মী মশার ওষুধ ছিটাচ্ছেন। এর বাইরে বিশেষ কর্মসূচির অধীন চারটি ওয়ার্ডে আরও ২৮ জন কর্মী নিয়োজিত আছেন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, মশার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। তবে কয়েক মাসের মধ্যে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়নি।