ভারতে ৮৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হবে ত্রিকোণাকার নতুন পার্লামেন্ট ভবন…
ভারতের ঐতিহাসিক পার্লামেন্ট ভবনটি ভেঙে ফেলে তৈরি হবে নতুন পার্লামেন্ট ভবন।
নতুন ভবনটি হবে তিনতলা এবং ত্রিভুজাকৃতি।
নতুন ভবনটি বর্তমান পার্লামেন্টের চেয়ে বড় হবে এবং সেখানে ১ হাজার ৪০০ এমপির জন্য আসন থাকবে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই)।
বিবিসি সূত্রে জানা যায়, ভারতীয় স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির বছরকে সামনে রেখে এই প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে গতকাল বুধবার ভারতের কেন্দ্রীয় গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানায়।তথ্য মতে জানা যায়, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ত্রিকোণাকার সংসদ ভবন তৈরি করতে যাচ্ছে ভারত। বর্তমান সংসদ ভবনের পাশেই নির্মিতব্য এ ভবনের সর্বোচ্চ খরচ ধরা হয়েছিল ৯৪০ কোটি টাকা।
তবে, ৮৬২ কোটি টাকায় এটি নির্মাণ করবে দেশটির শীর্ষস্থানীয় টাটা প্রজেক্টস লিমিটেড।
রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে শুরু হয়ে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হবে সেন্ট্রাল ভিস্টা। তবে নতুন ভবনের সংসদে সংসদ সদস্যের আসন থাকবে ৯ শ থেকে ১২ শ টি।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ স্থপতি হারবার্ট বেকার ভারতের বর্তমান গোলাকৃতি পার্লামেন্ট ভবনটির নকশা তৈরি করেছিলেন। এই ভবনে বিশাল গম্বুজাকৃতি হল রয়েছে এবং নির্মাণকাজ শেষ হয়েছিল ১৯২৭ সালে।
ভারতীয় ঐতিহাসিক দিনিয়ার প্যাটেল এক নিবন্ধে লিখেছেন বর্তমান ভবনটি নির্মাণের পর এর গোলাকৃতি স্থাপত্য ও নকশা নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনাই যে শুধু হয়েছিল তাই নয়, তদানীন্তন ব্রিটিশ রাজনীতিক, লেখক ও বুদ্ধিজীবী মহলে এই নকশা নিয়ে নানা ঠাট্টা-মশকরাও করা হয়েছিল।
দিল্লিতে ঔপনিবেশিক আমলের সরকারি ভবনগুলো আধুনিকায়নের জন্য সরকারের নেওয়া ২০০ কোটি ডলারের এক প্রকল্পের অংশ হিসাবে নতুন পার্লামেন্ট ভবন নির্মাণের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে গোটা প্রকল্পটি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। প্রকল্পের সমালোচকরা এর খরচ এবং নতুন ভবনগুলোর নির্মাণশৈলীর নান্দনিকতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
দেশটিতে নতুন পার্লামেন্ট ভবনের জন্য দাবি প্রায় এক দশকের পুরোনো। নতুন একটি ভবন তৈরির প্রয়োজনীয়তার পক্ষে পার্লামেন্টে গত এক দশক ধরে বক্তব্য দিয়ে এসেছেন বিভিন্ন স্পিকার।
তবে সমালোচকরা বলেছেন, এই বিপুল পরিমাণ অর্থে নতুন পার্লামেন্ট ভবন নির্মাণ না করে, বরং সরকারের উচিত তা করোনা ভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে ব্যয় করা।
ভারতে শনাক্ত হওয়া কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়েছে। বিশ্বে আক্রান্তের তালিকায় ভারত এখন ২ নম্বরে। দেশটিতে মারা গেছে ৮০ হাজারের বেশি মানুষ।
কিন্তু সরকার যুক্তি দিয়েছে যে,দেশটিতে নতুন পার্লামেন্ট ভবনের প্রয়োজন কারণ বর্তমান ভবনটি তৈরি হয়েছিল ১৯২০-এর দশকে এবং ভবনটিতে ক্ষয় ও অতি ব্যবহারের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। সরকার বলছে সংসদ সদস্য ও সংসদ কর্মচারীর সংখ্যাও বেড়ে গেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রকল্পটির কাজ পেতে টাটাসহ মোট ৭টি কোম্পানি দরপত্র জমা দিয়েছিল। যার মধ্যে লারসেন অ্যান্ড টুবরো ও সাপুরজি’র মতো প্রতিষ্ঠানও ছিল।
ইতিমধ্যে, দেশটির নতুন পার্লামেন্ট ভবন নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভারতের অন্যতম বৃহত্তম ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান টাটাকে।
এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে ওয়ার্ক অর্ডার পাওয়ার ২০-২১ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। রাজধানী দিল্লির কেন্দ্রে ১১ কোটি ৭০ লাখ ডলার ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ ২০২২ সালে শেষ হবে বলে জানানো হয়েছে।
এসি/বিবিএন /স্টাফ রিপোর্টার।