ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অবিসংবাদিত নেতা আব্দুল কুদ্দুস মাখন ও আ স ম আব্দুর রব
১৯৭২ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অবিসংবাদিত নেতা আব্দুল কুদ্দুস মাখন ও আ স ম আব্দুর রব।
আবদুল কুদ্দুস মাখন ১৯৪৭ সালের ১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপজেলার পুনিয়াউটে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৭০ সালে আবদুল কুদ্দুস মাখন ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের অপরাপর নেতা ছিলেন নূরে আলম সিদ্দিকী, আ.স.ম আবদুর রব ও শাহজাহান সিরাজ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকবাহিনী কর্তৃক গণহত্যা শুরুর পূর্ব পর্যন্ত স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদই ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোভাগে।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যান্য নেতাসহ আবদুল কুদ্দুস মাখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন চত্বরে ১৯৭১ সালের ২ মার্চ স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন এবং পরদিন তিনি তাঁর সহকর্মীসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক বলে ঘোষণা দেন। ৩ মার্চ ছাত্র পরিষদের এক জনসভায় স্বাধীনতার প্রথম ইস্তেহার পাঠ করা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি ও বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক ঘোষণা দেওয়া হয় ওই ইস্তেহারে। ছাত্রনেতৃবৃন্দ সারা দেশে ২৩ মার্চ স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধেও আব্দুল কুদ্দুস মাখনের ছিল অসামান্য অবদান। তিনি ছিলেন পূর্বাঞ্চলীয় লিবারেশন কাউন্সিলের ছাত্র বিষয়ক প্রতিনিধি। সকল মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুমেন্ট, ট্রেনিং ও অস্ত্র সরবরাহের দায়িত্ব ছিলো তাঁর কাছে।
জনাব মাখন ১৯৭২ সালে ভারতের কলকাতায় অনুষ্ঠিত ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী মেলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৭৩ সালে ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও যুবলীগ সমন্বয়ে গঠিত দলের সদস্য হিসাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চল সফর করেন।
তিনি মাত্র ৪৭ বছর বয়সে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস জনিত জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হয়ে লিভার সিরোসিসে ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪ সালে আমেরিকার ফ্লোরিডায় চিকিত্সাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যু সংবাদ রেডিও, টিভিতে প্রচারিত এবং সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হবার পর গোটা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। তথকালীন সময়ে কার্যরত জাতীয় সংসদ অধিবেশন তার মৃত্যুর সংবাদ প্রাপ্তির সাথে সাথে মুলতবি ঘোষণা করা হয়।
ছবিতে তার জানাজায় এক নজর দেখার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভীড়। বেশ অল্প বয়সেই মারা যান তিনি। তিনি থাকলে হয়তো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উন্নয়নে আরো অবদান রাখতে পারতেন।