আলোচিত মিতু হত্যা মামলায় বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামের আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
মঙ্গলবার (১১ মে) সন্ধ্যায় বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে দুপুরে চট্টগ্রামের মনসুরাবাদ পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমাসহ পিবিআইয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে এ বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করছে পিবিআই।
সে সময় পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘তিনি (বাবুল) আগেও এসেছিলেন। আজকেও পিবিআইতে গেছেন। মামলার বাদী হিসেবে উনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হাইকোর্টের রুলিং আছে, এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না।’
তবে পিবিআইয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চট্টগ্রামে হাজির হয়েছেন বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘উনি মামলার বাদি। আমরা যেহেতু মামলা তদন্ত করছি, উনি অগ্রগতি জানতে আমাদের কাছে এসেছিলেন।’
২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে গিয়ে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ের কাছে ওআর নিজাম রোডে নির্মমভাবে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ছুরিকাঘাত ও গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার অজ্ঞাতপরিচয় তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মিতু হত্যাকাণ্ডের পর প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, জঙ্গিরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কারণ তার স্বামী বাবুল আক্তার জঙ্গিবিরোধী অপারেশনে পুলিশের প্রথম সারির কর্মকর্তাদের একজন ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে বাবুল আক্তার ও মিতুর পরকীয়ার বিষয়টিও আলোচিত হয় গণমাধ্যমে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্যও নিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
তবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পুলিশ এসবের কোন যোগসুত্র খুঁজে পায়নি। হত্যাকাণ্ডের বছরখানেক পর থেকেই মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন দাবি করে আসছিলেন, বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় ও নির্দেশে তার মেয়ে মিতুকে খুন করা হয়েছে।
মিতু হত্যাকাণ্ডের পর একটি মাজারের খাদেম আবু নছর ওরফে গুন্নু ও শাহজামান ওরফে রবিন নামের আরও এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পরে তারা জামিনে বেরিয়ে আসেন। হত্যকাণ্ডের ২০ দিন পর তদন্ত ভিন্নখাতে মোড় নেয়।
২০১৬ সালের ২৪ জুন মধ্যরাতে ঢাকার বনশ্রী এলাকার শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুল আক্তারকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। পরে তাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপর নানা গুঞ্জন ডালপালা ছড়ায়। এসময় পুলিশ জানায়, বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেছেন বাবুল আক্তার।
তবে বাবুল আক্তারের দাবি ছিল, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেননি। ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন তিনি। নানা নাটকীয়তা শেষে ৬ সেপ্টেম্বর বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মিতু হত্যার ২১ দিন পর ২৬ জুন গ্রেপ্তার করা হয় ওয়াসিম ও আনোয়ারকে। আদালতে জবানবন্দি দেন তারা। এরপর বেরিয়ে আসে হত্যায় জড়িতদের তথ্য। জবানবন্দিতে তারা জানান মুছার নেতৃত্বে ওয়াসিম, আনোয়ার, মো. রাশেদ, নবী, মো. শাহজাহান ও মো. কালু হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন।
হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে ছিলেন ওয়াসিম, মুছা ও নবী। মাহমুদাকে ছুরিকাঘাত করেন নবী। অস্ত্র সরবরাহ করেন এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা।
তবে কী কারণে, কার নির্দেশে তারা হত্যায় অংশ নিয়েছেন তা নিয়ে কোন তথ্য দেননি। একই বছরের ৪ জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের মধ্যে রাঙ্গুনিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন নবী ও রাশেদ।
মুছা ও কালুকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এক পর্যায়ে মুছাকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ।