নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেফতার ২…
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় স্বামীকে বেঁধে রেখে গৃহবধূকে নিজ ঘরে ধর্ষণ চেষ্টায় বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার ৩৩ দিন পর ৯ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রোববার (৪ অক্টোবর) রাত ১টার দিকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে নির্যাতিতা গৃহবধূ (৩৫) বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।
জানা যায়, এ ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত দুই দফায় অভিযান চালিয়ে দুই আসামিকে আটক করেছে।পুলিশ এক আসামিকে রোববার বিকেল ৪টায় দিকে এবং অপর আসামিকে রাত ১১টায় দিকে একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড থেকে আটক করেছে।
আটকৃতরা হলেন— উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জয়কৃঞ্চপুর গ্রামের খালপাড় এলাকার হারিদন ভূঁইয়া বাড়ির শেখ আহম্মদ দুলালের ছেলে মো. রহিম (২০) ও মোহর আলী মুন্সি বাড়ির মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে মো. রহমত উল্যাহ (৪১।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন উর রশীদ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পুলিশের ৫টি ইউনিট ৭ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে।পুলিশ অভিযুক্ত অপর আসামিদের গ্রেফতারে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে।
অপরদিকে,ঘটনার পর ভয়ে বাড়ি ছাড়া নির্যাতিতা গৃহবধূকে সদর উপজেলার মাস্টার পাড়ার তার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে বলে জানা যায়।
এইদিকে, ভুক্তভোগী গৃহবধূর বাবা জানান, ‘সন্ত্রাসীদের ভয়ে কোনো কথা বলার সাহস পাই না।’
জানা গেছে, গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখে স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা। এরপর তারা গৃহবধূকে ধর্ষণেরও চেষ্টা করে। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা তাকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে।এছাড়া তারা মোবাইলে ভিডিও চিত্রও ধারণ করে।
ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, নির্যাতনকারীরা ওই গৃহবধূর পোশাক কেড়ে নিয়ে তার বিরুদ্ধে কিছু একটা বলছে। তিনি প্রাণপণে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেন এবং হামলাকারীদের ‘বাবা’ ডাকেন, তাদের পায়ে ধরছেন। কিন্তু, তারা ভিডিও ধারণ বন্ধ করছে না। বরং হামলাকারীরা তার মুখে, শরীরে লাথি মারছে। এরপর তার শরীরে একটা লাঠি দিয়ে মাঝে মাঝেই আঘাত করতে থাকে। এসময় ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার উল্লাস প্রকাশ করে ‘ফেসবুক’ ‘ফেসবুক’ বলে চিৎকার করছেন আরেকজন সহযোগী।
এদিকে এ ঘটনার পর অভিযুক্ত স্থানীয় দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও তাদের সহযোগীরা নির্যাতিতা গৃহবধূর পরিবারকে কিছু দিন অবরুদ্ধ করে রাখে। এক পর্যায়ে তার পুরো পরিবারকে বসত বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে। এ কারণে এই ঘটনাটি স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ প্রশাসনের অগোচরে থাকে।
তবে ওই ভিডিও চিত্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনার ৩২ দিন পর রোববার (৪ অক্টোবর) গৃহবধূকে নির্যাতনের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়।সারা দেশ থেকে নির্যাতনকারীদের শাস্তির দাবী উঠে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত মাসের ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে গৃহবধূর (৩৫) বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রেখে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে শ্লীলতাহানি করে স্থানীয় বাদল ও তার সংঘবদ্ধ বখাটে যুবক দল।
ওই সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা তাকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করে।
এছাড়া ওসি আরো জানান, পুলিশ অভিযুক্ত অপর আসামিদের গ্রেফতারে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। আটকৃত আসামিদের বিচারিক আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
এই ব্যাপারে, নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে এবং নির্যাতিতা পরিবারকে আইনি সহযোগিতা দিতে জেলা পুলিশের ৫টি ইউনিট কাজ করছে মাঠে। গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে ও জানান তিনি।
এসি/বে অব বেঙ্গল নিউজ/বিবিএন /স্টাফ রিপোর্টার।