নবজাতক শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায় ২০২৪
জন্মের পর নবজাতক এর ওজন কত থাকা উচিত তা নিয়ে অনেক বাবা মায়েদেরই চিন্তা থাকে। অনেকেই নবজাতকের সঠিক ওজন কত হয় সাধারণত তা নিয়ে তেমন কোন জ্ঞান রাখেন না। জন্মের পর নবজাতক এর ওজন কম হলে তা নিয়ে অনেক বাবা মা-ই ঘাবড়ে যান। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা নবজাতক শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায় সম্বন্ধে আলোচনা করব।
নবজাতক এর ওজন:
নবজাতক শিশুর ওজন ২৫০০ গ্রাম থেকে ৪০০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। তবে, ওজন ৪০০০ গ্রাম এর বেশি হলে শিশুকে জন্মগত ভাবে স্থূল বলে ধরা হয় এবং এটিকে একধরনের শারীরিক সমস্যা বলেই বিবেচনা করা হয় শিশুর জন্য। আবার, ১৫০০ গ্রাম এর থেকে কম হলে নবজাতককে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হয়। তখন তাকে ফিডিং টিউব সহ ইনকিউবেটরে রাখা হয়। নবজাতক শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায় গুলো জানা এক্ষেত্রে বেশ দরকারি।
জন্মের সময় নবজাতকের ওজন কম বা বেশি কেন হয়?
জন্মের সময় একটি নবজাতকের ওজন কম হবে নাকি বেশি হবে নাকি স্বাভাবিক হবে তা বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। যেমন- গর্ভাবস্থায় কেমন পুষ্টি পেয়েছে, মা ও বাবার জিন কেমন, গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীর কেমন ছিল, জন্মের ক্রম, একক শিশু নাকি যমজ শিশু ইত্যাদি।
গর্ভাবস্থায় পুষ্টির জোগান ও মায়ের অবস্থা:
বাচ্চা গর্ভে থাকা অবস্থায় মা কে তাজা, পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। কারণ, মায়ের পেটে থাকার সময়ে মায়ের গৃহীত খাবার থেকেই পুষ্টি পায় শিশু। বাচ্চার শরীরের বিকাশ ও মানসিক গঠন অনেকাংশেই এই পুষ্টির ওপর নির্ভরশীল। বাচ্চা গর্ভে থাকা অবস্থায় মা ভালো খাবার খেলে ও সুস্থ থাকলে এবং নিজে পর্যাপ্ত পুষ্টির জোগান পেলে তবেই সুস্থ সবল বাচ্চা জন্ম দিতে পারেন তিনি।
জন্মের ক্রম ও একক / যমজ শিশু:
সাধারণত দেখা যায় প্রথম সন্তান এর জন্মের সময় বাচ্চার ওজন পরবর্তীতে অন্যান্য সন্তানদের থেকে তুলনামূলক ভাবে কম হয়ে থাকে। এছাড়া, একক সন্তানের বদলে যমজ শিশু হলে পুষ্টি দুই শিশুর ভাগ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রেও শিশুর ওজন জন্মের সময় কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মা ও বাবার জিনগত বৈশিষ্ট্য:
সন্তানের গঠন তার মা ও বাবার গঠনের ওপর অনেকটা নির্ভর করে। বাবা ও মা লম্বা ও সুগঠিত হলে বাচ্চাও স্বাভাবিক ওজনের হয়ে থাকে। কিন্তু মা বাবা যদি খর্বাকৃতির ও রোগা হয় তবে জন্মের সময় বাচ্চার ওজন কম হতে পারে।
এছাড়াও নানা কারণে একজন মা কম ওজন সম্পন্ন নবজাতকের জন্ম দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে নবজাতক শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায় গুলো জেনে রাখলে কাজে আসবে।
নবজাতক শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায়:
১. খিদের সংকেত লক্ষ্য করা: একটি শিশু যখন ক্ষুধার্ত হয় তখন সে বেশ কিছু ভাবে তা বোঝানোর চেষ্টা করে যেমন- আঙ্গুল চোষা, ছটফট করা, কান্না করা বা মাথা দোলানো। এই বিষয়গুলো বেশ নজর দিয়ে খেয়াল করতে হবে। নবজাতকের মধ্যে এই লক্ষণ গুলো দেখা গেলে তখনই তার খাবার প্রস্তুত করে তাকে খাওয়ানোর প্রস্তুতি নিতে হবে। খিদে পেটে বাচ্চাকে খাওয়ালে তা বাচ্চার ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে। অনেকে ভাবেন শিশু কাঁদবে তারপরই তাকে খাওয়াবেন। আদতে এটি ভুল প্রক্রিয়া। কান্না করা অবধি অপেক্ষা করাই উচিত নয়। এছাড়া, শিশু ক্ষুধার্ত থাকলে তাকে খাওয়াবার চেষ্টা করা বাদ দিয়ে তার সাথে খেলা বা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করা উচিত নয়। এতে তার খাওয়ার ইচ্ছে বা রুচি কমে যাবে।
২. বুকের দুধ: নবজাতক বাচ্চাকে উচিত শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো অন্তত ৬ মাস পর্যন্ত। আজকাল চিকিৎসকরা এই পরামর্শই দিয়ে থাকেন নতুন বাবা মায়েদের। তবে সেক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে বুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ উৎপাদন হচ্ছে কি না৷ নইলে শুধু মায়ের বুকের দুধ দিয়ে ওজন বাড়ানো খুব কষ্টকর।
৩. চাহিদা অনুযায়ী খাবার খাওয়ানো: নবজাতকদের সাধারণত প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘন্টা পরপর একবার করে খাবার দিতে হয়। প্রতিটি শিশু আলাদা তাই তাদের খাবারের চাহিদাও আলাদা। নবজাতকের ওজন বাড়ানোর জন্য তাই ক্ষুধার্ত হলেই শিশুকে বুকের দুধ বা ফর্মুলা খাওয়াতে হবে।
৪. ঘুমন্ত অবস্থায় শিশুর সাথে আচরণ: অনেক শিশুই আছে যারা খাওয়ার জন্য কোন সংকেত দেয় না। ঘুমিয়েই থাকে, ঘুম থেকে খেতে ওঠে না নিজ থেকে। এদের ঘুমন্ত শিশু বলা হয়। এদের ক্ষেত্রে বাবা মা কে নিজ দায়িত্বে উঠিয়ে শিশুকে খাওয়াতে হবে নইলে তাদের ওজন বৃদ্ধি করা বেশ কঠিন কাজ।
নবজাতকের জন্মের সময় ওজন কম থাকা বাবা-মায়ের জন্য বেশ চিন্তার কারণ। তারা সন্তানের ভালো মন্দ নিয়ে সর্বদাই উদ্বিগ্ন থাকেন। নবজাতক শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায় গুলো জানা থাকলে নিশ্চিন্তে তারা শিশুর পেছনে সময় দিতে পারবেন ওজন বৃদ্ধির জন্যে।