জীবনের মাত্র তেরটি বছর কারাগারের বাইরে ছিলেন যে নেতা!
একদা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “বাংলার কৃষক ও শ্রমিকদের জন্য আমি ১৪ বছর জেল খেটেছি,আমার যৌবন কেটেছে কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে।”
প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভাই শেখ কামালের একটি ঘটনা শেখ হাসিনা লিখেছেনও। তিনি তার ভাষায় বলেন, “শেখ কামাল আব্বাকে কখনো দেখে নাই, চেনেও না। আমি যখন বারবার আব্বার কাছে ছুটে যাচ্ছি, আব্বা আব্বা বলে ডাকছি, ও শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে…ও হঠাৎ আমায় জিজ্ঞেস করল, হাসু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলে ডাকি।”
সেই ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম দিয়ে শুরুর পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত সারাজীবনের এক-চতুর্থাংশ সময় কারাগারেই কাটাতে হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
৫৪ বছর বয়সের ছোট জীবনে বঙ্গবন্ধু ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে ছিলেন, যা তার মোট জীবনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ। যদি হিসেব করে দেখা যায় বঙ্গবন্ধু কারাগারের বাইরে ছিলে প্রায় ১৩ বছর মাত্র।
বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন, কারাগারে থাকার কারণে তার ছোট ভাই-বোনরা বাবার সংস্পর্শ খুব কমই পেয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু স্কুলের ছাত্র অবস্থায় ব্রিটিশ আমলে সাতদিন কারাভোগ করেন, বাকি ৪ হাজার ৬৭৫ দিন তার জেলে কাটে দেশভাগের পরে পাকিস্তান আমলে।
জাতির পিতা স্কুলের ছাত্র অবস্থায় ১৯৩৮ সালে সর্বপ্রথম কারাগারে যান। ওই সময় তিনি সাত দিন কারাভোগ করেন। এরপর ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত তিনি পাঁচ দিন কারাগারে ছিলেন। একই বছর ১১ সেপ্টেম্বর কারাগারে গিয়ে তিনি মুক্তি পান ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি। এ দফায় তিনি ১৩২ দিন কারাভোগ করেন।
আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিব ১৯৪৯ সালের ১৯ এপ্রিল আবারও কারাগারে গিয়ে ৮০ দিন থেকে মুক্তি পান ওই বছরের ২৮ জুন। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি আবারও ২৭ দিন কারাভোগ করেন।
১৯৪৯ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৩ দিন তিনি কারাভোগ করেন। ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি টানা ৭৮৭ দিন বঙ্গবন্ধু কারাগারে ছিলেন।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পরও বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে যেতে হয়েছিল। এ দফায় বঙ্গবন্ধু ২০৬ দিন কারাভোগ করেছিলেন।
১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল’ জারির পর বঙ্গবন্ধু ১১ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন। এসময়ে একটানা এক হাজার ১৫৩ দিন তাকে কারাগারে কাটাতে হয়।
এ সময়ই বঙ্গবন্ধু একটানা সব চেয়ে বেশি সময় (৩ বছরের বেশি) কারাভোগ করেন।
১৯৬২ সালের ৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আবারও গ্রেপ্তার হয়ে ওই বছরের ১৮ জুন মুক্তি পান। এ দফায় তিনি কারাভোগ করেন ১৫৮ দিন।
এরপর ১৯৬৪ ও ১৯৬৫ সালে বিভিন্ন মেয়াদে তিনি ৬৬৫ দিন কারাগারে ছিলেন।
বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচিত ছয় দফা দেওয়ার পর এর পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করতে গিয়ে কয়েক দফায় বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন। ৩২টি জনসভা করে বিভিন্ন মেয়াদে তিনি ৯০ দিন কারাভোগ করেন।
এরপর ১৯৬৬ সালে ৮ মে আবারও গ্রেপ্তার হয়ে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান শেখ মুজিব।
এসময় তিনি এক হাজার ২১ দিন কারাগারে ছিলেন। কারামুক্তির পর তাকে ছাত্র-গণ সংবর্ধনায় তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেওয়া হয়।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। তখন তাকে পাকিস্তানের মিয়ানালী কারাগারে একটি সেলের মধ্যে রাখা হয়। এ দফায় তিনি ছিলেন ২৮৮ দিন।
এই মহান বাঙ্গালী তার জীবনের খুব কম সংখ্যক বছর কিংবা দিন বাংলার আকাশ বাতাশ অনুভব করেছেন, কিন্তু এই বাংলা, এই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুকে ভুলবেনা।
বে অব বেঙ্গল নিউজ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে এই মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
সূত্রঃ গুগল, উইকিপিডিয়া, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম।
ডব্লিউ বি বি ও / বিবিএন / স্টাফ রিপোর্টার