খালের বাঁধ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কেটে না দিলে বর্ষাতে নগর ডুবে যাবে | রেজাউল
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ, দখল হওয়া খালের পুনরুদ্ধার, খালখনন কাজ দ্রুত শুরু করা ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকাজে দেওয়া বাঁধ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কেটে দিতে হবে। না হলে কিছু দিনের মধ্যে শুরু হতে যাওয়া বর্ষাতে নগর জলাবদ্ধতায় ডুবে যাবে।
যার নমুনা ঈদের দিনে এক ঘণ্টা বৃষ্টিতে টের পাওয়া গেছে।
রোববার (৩০ মে) টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে নগরের প্রাকৃতিক খালগুলোর অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা ও মনিটরিং নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটির দ্বিতীয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এসব কথা বলেন।
কমিটির সদস্যসচিব ও চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হকের সঞ্চালনায় প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দীন, কাউন্সিলর এম আশরাফুল আলম, মো. মোরশেদ আলম, মোহাম্মদ শহীদুল আলম, হাজি নুরুল হক, মো. আব্দুল মান্নান, চসিক সচিব খালেদ মাহামুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জিল্লুর রহমান, সিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার এসএম মোস্তাইন হোসেন, পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মো. নুরুল্লাহ নুরী, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি মামুনুল আহমেদ অনিক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অয়ন কুমার ত্রিপুরা, ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক নিউটন দাশ বক্তব্য দেন। চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম প্রজেক্টরের মাধ্যেমে কিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন।
মেয়র রেজাউল বলেন, নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে পুরোপুরি মুক্তি দিতে এত বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। যদি প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রীর একটি সদিচ্ছার অপমৃত্যু হবে এবং টাকারও অপচয় হবে।
তাই এ টাস্কফোর্স কমিটি এখন থেকে অন্তত ২ মাস পর সভায় মিলিত হতে হবে এবং নিয়মিত মনিটরিং করার দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে।
তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড যে সব স্লুইসগেট নির্মাণ করছে তা সম্পন্ন হয়ে গেলে পরিচালনার দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দেওয়া হলে তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে তা পরিচালনা সম্ভব হবে বলে জানান।
তিনি এ টাস্কফোর্স কমিটিতে চট্টগ্রাম ওয়াসাকে সংযুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জিল্লুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম নগরের প্রাণ কর্ণফুলী নদীতে প্রতিদিন ২২ হাজার টন মানববর্জ্য পড়ছে। ফলে এই নদীর দূষণ ঠেকানো যাবে কিনা বা আদৌ কর্ণফুলীকে বাঁচানো যাবে কিনা ভাবা উচিত।
তিনি চসিক নির্মিত আগ্রাবাদ বক্স কালভার্টের কারণে বন্দরের ১ নম্বর জেটি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান।
কর্ণফুলী নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজার দিয়ে খনন সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে দুই থেকে আড়াই মিটার স্তরে পলিথিনের কারণে ড্রেজিং করা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন ঢাকার চেয়েও কঠিন, সিডিএ ৫৭টি খালের মধ্যে ৩৬টিতে কাজ করছে। বাকি খালগুলোতে কাজ করা উচিত। এ জন্য চসিক আলাদা প্রকল্প নিতে পারে। ৪১টি স্লুইসগেটের মধ্যে সিডিএ ১৭টি ও ২৩টিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। এ প্রকল্পগুলো শেষ হলে চসিকের কাছে তা হস্তান্তর করা হবে, এ স্লুইসগেট পরিচালনার জন্য জনবল দরকার এবং এ জনবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি জানান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে যে বাঁধ দেওয়া হয়েছে সেই বাঁধ মে মাসের মধ্যে অপসারণের জন্য অনুরোধ করেছিলাম কিন্তু তারা আরও কিছুদিন সময় চেয়েছেন। তিনি খালের দু’পাশে প্রশস্ত রাস্তা করার জন্য চসিককে অনুরোধ জানান।
সিএমপি’র উপ পুলিশ কমিশনার এসএম মোস্তাইন হোসেন বলেন, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে সব সংস্থার সমন্বয় সাধন জরুরি। সেক্ষেত্রে চসিক মেয়রকে অভিভাবকের দায়িত্ব নিতে হবে।
তিনি অবৈধ উচ্ছেদের ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা দেবেন বলে জানান।
পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মো. নুরুল্লাহ নুরী বলেন, পাহাড় কাটা প্রতিরোধে ২০১০ সালে আইন প্রণয়নের পর পরিবেশ অধিদফতর দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি নির্মিতব্য স্লুইসগেট দিয়ে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হবে না বলে আশঙ্কার কথা জানান।
প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দীন বলেন, জলাবদ্ধতা প্রকল্পে চসিকের সঙ্গে সমন্বয় করা হয় না। খাল থেকে যে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে তা অপসারণের জন্য সিডিএকে দায়িত্ব নিতে হবে।
কাউন্সিলর মো. মোরশেদ বলেন, মাস্টারপ্ল্যান অনুসরণ করা হয়নি বলে খালের ওপর ভবন তৈরি হয়েছে। কর্ণফুলী ড্রেজিং না করলে মেগা প্রকল্পের সুফল পাওয়া যাবে না।