কিশোর গ্যাং কালচার-দায়ী কে?
ওয়াহেদ বুল বুল অর্পনঃ দেশজুড়ে সমাজের বুকে দুরারোগ্য ব্যাধির মতই বাসা বেধেছে কিশোর গ্যাং কালচার। নানা কারণে কিংবা সঠিক প্রতিকারের অভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা এই কালচারের অন্তর্ভুক্ত কিশোরদের-কিশোর অপরাধীদের। এই নিয়ে সঙ্কিত বিশেষজ্ঞরা।
যতদিন এই দেশে প্রভাবশালীরা নিজেদের প্রভাব বিস্তারে কিংবা প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য কিশোরদের প্রশাসনের চোখে মায়া ডলাস বানানোর চেষ্টা করবে এই দেশে কিশোর গ্যাং ব্যাঙ্গের ছাতার মত বৃদ্ধি পাবে। কিশোরদের শাস্তি নয় কাউন্সিলিং দরকার।
কিশোর গ্যাং কালচারকে প্রতিনিয়ত রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত করে আমরা এর মিথ্যে রূপ দিচ্ছি আর ধ্বংস করছি ফুটফুটে কিছু জীবন। মূলত কিশোর-গ্যাং ব্যাপারটি হচ্ছে একটি পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা। এটি কোন রাজনৈতিক সমস্যা না। কিশোরদের সঠিক কাউন্সিলিং দরকার শাস্তি না!
কিশোর গ্যাং কালচার। এটি খুবই পুরোনো একটি সংস্কৃতি। এমনকি ১৮৬০ শতকের দিকে পশ্চিমা বিশ্ব এই কালচারকে আয়ত্তে আনতে হিমশিম খেয়ে গিয়েছিল। গবেষণা মতে কৈশর জীবনের শুরু যেহেতু ১০ থেকে, ধরে নেয়া যাক ১০ থেকে ১৭ বছরের কৈশরের ফুটফুটে ভবিষ্যৎ আইন্সটাইন, তামিম-সাকিব, জুকার্বার্গ, ইবনে বতুতা, গ্রাহামসি কিংবা প্লেটো নিয়েই কিশোর গ্যাং কালচার।
এই কালচারের জন্য দায়ী স্বশিক্ষার অভাবে সন্তানকে আয়ত্তে না রেখে রাস্তার অলিতে গলিতে, পাড়ায় মহল্লায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধমে যা ইচ্ছে তা করার সুযোগ দেয়া পিতা-মাতারা। সমাজবিজ্ঞানীরা বারবার বলছেন, আপনার সন্তান কী করছে? কার সঙ্গে মিশছে, তা জানা যেমন জরুরি, ঠিক তেমনি জরুরি সন্তানকে সময় দেওয়া, তার সঙ্গে গল্প করা, তার মনের অবস্থা বোঝা, তার কাছে বাবা-মায়ের অবস্থান তুলে ধরা। আরও সহজভাবে বলতে গেলে, অভিভাবকদের সঙ্গে সন্তানের বন্ধন খুবই জরুরি। এই বন্ধন যত হালকা হবে, সন্তান তত বাইরের দিকে ছুটবে, বাইরের কলুষিত বিষবাষ্প গ্রহণ করবে প্রতিনিয়ত। তখন আর তাকে ফেরানোর কোনও রাস্তা থাকবে না।
“কিশোর গ্যাং” এরা কিছু নির্দ্দিষ্ট কাজ করে থাকে, আর এই কাজ করার সময় অবিভাবকের সচেতনতার দৃষ্টি কয় থাকে? কারণ আমি কিংবা আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন কিংবা পত্রিকা ঘেটে দেখবেন, এই গ্যাং গুলো কি করে?
চিল করে?
রাস্তায় জোরে জোরে হর্ণ দিয়ে বাইক চালিয়ে বেড়ায়।
এক গলি থেকে আরেক গলিতে প্রভাব বিস্তার করে?
সাধারণ মানুষকে উত্যক্ত করে কিংবা হেয় করে কথা বলে!
এদের অধিকাংশই হয় মাদকাসক্ত।
এবার আসা যাক ১৮৬০ শতকের পশ্চিমা বিশ্বে গ্যাং কালচারে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইংল্যান্ডের তরুণ এবং তাদের গ্যাংগুলো মারামারি আর ছুরি নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। রাস্তায় প্রায়ই তারা ঝগড়া করতো, মারামারি করতো। এতে করে সাধারণ পথচারীরা তাদের যন্ত্রণায় অতীষ্ট হয়ে ওঠে। ১৮৯০ সালের দিকে শহরটির কিছু দূরদর্শী মানুষ বুদ্ধি করে একটা পরিকল্পনা করলেন। শহরের বিভিন্ন জায়গায় তারা বস্তিবাসী যুবকদের জন্য খেলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা করে দিতে থাকেন। তখনই তরুণ যুবকরা ধীরে ধীরে খেলা ও বিনোদনের জায়গাগুলোয় আসতে শুরু করলো। এতে করে তারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া ও মারামারি বাদ দিয়ে খেলা ও বিনোদনে বেশি সময় দেওয়া শুরু করলো। ঝগড়া, মারামারি, ছুরি সন্ত্রাসের জায়গা দখল করে নিলো ফুটবল। সেই সময় ওই শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ম্যানচেস্টার সিটি নামের দুটি ক্লাব।
পশ্চিমা বিশ্বের এই ইতিহাস থেকে আমরা শিক্ষা নিতেই পারি। কিন্তু আমরা, আমাদের কিশোর ভাইদের জন্য জ্ঞানী-গুনীরা কি ভাবছেন?
আমরা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে এদের নাম বিক্রি করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্যে প্রশাসনের চোখে এদের অপরাধী করে তুলছি। নিয়মিত পত্রিকার হেডলাইনে নিজেদের দেখে এই অল্প বয়সী মাদকাসক্ত কিশোর ভাইগুলো নিজেদের কতটা জোস ভাবে কল্পনা করে একটু চিন্তা করুন! ঠিক যেন শুট আউট এট লোখান্ড ওয়ালা এর মায়া ডলাসের মত।
এই কল্পনা করার সুযোগ পরিবারই সবার আগে দিচ্ছে, এরপর রাষ্ট্র। যেখানে এই কিশোর মানুষ গুলো একমাত্র সঠিক কাউন্সিলিং কিংবা রিহেভ এর মাধ্যমে পুরোপুরিই সুস্থ হয়ে দেশের জন্য অনেক কিছু করতে পারে।
এই কলামটি লেখার আগে কয়েকজন কিশোর অপরাধীর সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছে আমার। তাদের মধ্যে শরীফ নামের একজন বলেন, আমি ভাল হতে চাই। কিন্তু আমাকে ভাল হওয়ার সুযোগ দিবে কে?
এদের সবার সাথে কথা বলেই আমি প্রায় একই রকম প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি।
তাদের প্রশ্নের উত্তর আমাদের বের করতেই হবে নাহলে বিপদগামী কিশোরেরা আরো বিপথে ধাবিত হবে।